Advertisement
E-Paper

শ্রমিক মেলা হুগলিতে, যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

মেলায় উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি, একাধিক বিধায়ক, শ্রম দফতরের কর্তারা। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কয়েকশো শ্রমিক এসেছিলেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩২
শ্রম দফতরের উদ্যোগে শিল্পমেলা। চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবনে বুধবার।

শ্রম দফতরের উদ্যোগে শিল্পমেলা। চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবনে বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্য শ্রম দফতরের উদ্যোগে দু’দিনের হুগলি জেলা শ্রমিক মেলা বুধবার শুরু হল চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবনে। শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা লোকজনের একাংশের ক্ষোভ, সরকারের ‘শ্রমিক-দরদি’ ভাবমূর্তি তুলে ধরতেই মেলা। তবে শ্রমিকের প্রকৃত দুর্দশার কথা আলোচিত হয় না।

এমন অভিযোগ অবশ্য প্রশাসন মানেনি। তাদের দাবি, শ্রমিকদের কল্যাণে প্রশাসন সব সময়েই তৎপর। মেলার উদ্বোধন করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের পাশে আমরা আছি।’’ প্রশাসনের দাবি, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে এ দিন ৯৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৩৪ টাকার চেক শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০২টি চেক বিলি করা হয়েছে।

মেলায় উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি, একাধিক বিধায়ক, শ্রম দফতরের কর্তারা। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কয়েকশো শ্রমিক এসেছিলেন। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প সম্পর্কে তাঁদের জানানো হয়। সামাজিক সুরক্ষায় বিমা বাবদ আগে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মাসিক ২৫ টাকা দিতে হত। সরকার দিত ৩০ টাকা। বছরখানেক ধরে ৫৫ টাকাই শ্রম দফতর দেয়। শ্রমিকদের টাকা দিতে হয় না। দুর্ঘটনায় জখম হলে বা মৃত্যু ঘটলে অথবা স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলেও এককালীন ক্ষতিপূরণ মেলে এই প্রকল্পে।

এত সবের পরেও প্রশ্ন অবশ্য থাকছেই। হুগলিতে এই মেলা নিয়ে দিন কয়েক আগে জেলাশাসক, শ্রম দফতরে চিঠি দিয়েছে চন্দননগরের শ্রমিককল্যাণ সমিতি। সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, শ্রমিকের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে মেলায় কোনও আলোচনাই করা হয় না। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, জেলায় কয়েক হাজার হকার দুরবস্থায় রয়েছেন। বহু শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পুরসভা, পঞ্চায়েতে অসংখ্য অস্থায়ী কর্মী সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম বেতন পান না। বছরের পর বছর স্থায়ীকরণ হচ্ছে না। ‘সম কাজে সম বেতন’ মিলছে না। চটশিল্পের বহু শ্রমিক গ্র্যাচুইটি পান না। বিভিন্ন কল-কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে। পেশাগত রোগ মোকাবিলা নিয়ে নিয়ে ভাবনাচিন্তা নেই। শ্রমিক আবাসনের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। বন্ধ কল-কারখানার পরিবর্তে নতুন শিল্প আসেনি। ফলে কাজের অভাব রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা তিমিরেই। সংগঠনের উপদেষ্টা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জায়গায় জায়গায় শিবির করে শ্রমিকের সমস্যা নিরসনের ব্যবস্থা করাই বাস্তবোচিত প্রক্রিয়া, অন্যথায় শ্রমিক মেলা অর্থহীন।’’

সম্প্রতি শ্রমিককল্যাণ সমিতির সপ্তম সম্মেলন হয় চন্দননগরে। সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রীকে গণ-স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয় শ্রমিকদের পেনশন বাড়ানো এবং প্রবীণ নাগরিকদের যে সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা চালুর দাবিতে। মুখ্যমন্ত্রীকে গণ-স্বাক্ষর করা চিঠি পাঠানো হয়েছে শ্রমিক স্বার্থে কাজের ক্ষেত্রে সরকারের এবং শ্রম দফতরের ব্যর্থতা এবং প্রচলিত শ্রম আইন পুরোপুরি কার্যকর না করার প্রতিবাদে।

যুগ্ম শ্রম কমিশনার (শ্রীরামপুর) ত্রিদিবেশ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘শ্রমিকদের সমস্যার অভিযোগ পেলে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করি। অভিযোগ না পেলে কিছু করার থাকে না। সরকার অনেক সময় অসংগঠিত শ্রমিকদের সাহায্যার্থে পদক্ষেপ করে। কাজের সুবিধার জন্য কিছু সামগ্রীও দেওয়া হয়।’’

সহ প্রতিবেদন: সুদীপ দাস

West Bengal Labor Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy