Advertisement
১০ মে ২০২৪
Illegal Works

Hoogly: হুগলিতে অবাধে লুট হচ্ছে মাটি, মানছে শাসক দলও

মাটি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে অনেকেই অতিষ্ঠ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মিলছে না।

মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরামবাগের জয়রামপুরে। নিজস্ব চিত্র

মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরামবাগের জয়রামপুরে। নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২২ ০৬:১৩
Share: Save:

অবাধে লুট হচ্ছে মাটি। কৃষিজমি থেকে বন্ধ কারখানা অথবা গঙ্গার পলিমাটি কেটে পাচার চলছে হুগলি জেলার তিন মহকুমা জুড়ে, পরিবেশকর্মী ও বহু সাধারণ মানুষের অভিযোগ এমনই। অভিযোগ সত্য, মানছে শাসক দলের জেলা নেতৃত্বও।

মাটি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে অনেকেই অতিষ্ঠ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মিলছে না। উল্টে, জুটছে হুমকি। পরিবেশকর্মীদের ক্ষোভ, পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকার তোয়াক্কা না করে মাটি কাটা চলছে। ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশিকা না মানার।

পরিস্থিতিটা ঠিক কেমন?

অভিযোগ, হুগলির কেওটায় এক ইটভাটা কর্তৃপক্ষ গঙ্গা থেকে সরাসরি দীর্ঘ এলাকা জুড়ে পলিমাটি তুলে নিচ্ছেন। ওই এলাকায় গঙ্গায় একটি বড় চর পড়েছে। সেখানে সরাসরি ট্রাক্টর নামিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার সম্প্রতি ওই ইটভাটায় হানা দেন। চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারপরে মাটি কাটা সাময়িক বন্ধ হলেও ফের শুরু হয়েছে।

বিধায়ক অসিতবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি স্থানীয় মানুষজন আমরা নজরে এনেছিলেন। পুলিশ, প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। শুনেছি, অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে গিয়েছে। আইন-আদালতের বিষয় অতশত বুঝি না।’’ একই বিষয়ে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। কেওটায় গঙ্গার চর, মাটি কেটে
মাফিয়ারা স্রোতের অভিমুখ পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে শাসক দলের লোকজন জড়িত। এরা এলাকার মানচিত্রই বদলে দেবে। পুলিশ-প্রশাসন ঠুঁটো।’’

শুধু জেলা সদর নয়, শ্রীরামপুর এবং চন্দননগর মহকুমারও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাটি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা, ডানকুনি, হিন্দমোটর, সিঙ্গুরের নানা এলাকায় একই অভিযোগ উঠছে। চণ্ডীতলার বনমালীপুর ও মালিপুকুর এলাকায় মাটি কাটার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনকে জানালে সাময়িক বন্ধ থাকে। লোকদেখানো কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়। তারপর পরিস্থিতি যে কে সেই। মাটি-মাফিয়ারা এতটাই বেপরোয়া যে, যাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের চিহ্নিত করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এক গ্রামবাসীর খেদ, ‘‘পুলিশকে সরাসরি অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু, কারা অভিযোগ জানাচ্ছেন, সেই তথ্য দুষ্কৃতীরা জানতে পারছে কী করে? পুলিশের একাংশও সম্ভবত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রয়েছেন।’’ একই অভিযোগ উঠেছে জাঙ্গিপাড়া ব্লকের ফুরফুরা এবং রাধানগর পঞ্চায়েত এলাকায়। দুষ্কৃতী-যোগের কথা মানেনি পুলিশ। তাদের বক্তব্য, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক তথা শাসক দলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্নেহাশিস চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বেআইনি মাটি কাটা নিয়ে আমার কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন মশাট এলাকার গ্রামবাসীরা। জেলাশাসককে বিষয়টি জানাই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এটা বাস্তব যে, কৃষিজমির মাটি কাটা হলে চাষের এলাকা কমে যাবে। যাঁরা জমির মাটি বিক্রি করতে ইচ্ছুক নন, তাঁদের জমিরও ক্ষতি হচ্ছে ভয়ঙ্কর। আমি পুলিশ-প্রশাসনকে এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে ফের জানাব।’’ বন্ধ হিন্দমোটর ও জে কে স্টিল কারখানার জমির মাটিও দুষ্কৃতীরা নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Works Hoogly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE