E-Paper

বেপরোয়া গাড়ি, কড়া পদক্ষেপ চায় ভুক্তভোগীর পরিবার

দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে চালকের ১০ বছর জেল এবং ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার আইন শুনে ক্ষুব্ধ ট্রাকচালক বুধন ভকত। আদতে বিহারের মুজফরপুরের বুধন থাকেন মগরায়।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ট্রাকের ধাক্কা বদলে দিয়েছে ছাপোষা অপূর্ব ঘোষের জীবন। তিনি কার্যত শয্যাশায়ী। আত্মীয়েরা ভাবেন, ট্রাকচালক সচেতন হলে এমন দিন আসত না!

ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় দুর্ঘটনা নিয়ে ‘অত্যাধিক’ কড়া আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন ট্রাকমালিক এবং চালকেরা। অপূর্বর আত্মীয়েরা বলছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানো আটকাতে আইনের কিছুটা কড়াকড়ি এবং চালকদের সচেতন করা জরুরি। ভাই অমিয় বলেন, ‘‘একটা দুর্ঘটনা কী ভাবে একটা সংসার শেষ করে দিতে পারে, ভুক্তভোগীরাই জানেন।’’

ট্রাক চালকদের আবার বক্তব্য, পথ-সুরক্ষার নামে তাঁদের উপরে কার্যত শাস্তির খাঁড়া নামানো হচ্ছে। এতে তাঁদের পরিবার শেষ হয়ে যাবে। অনেক দুর্ঘটনা চালকের দোষে হয় না। এ ক্ষেত্রে লঘু পাপে গুরুদণ্ড হবে!

চণ্ডীতলার গটুলের বাসিন্দা অপূর্ব বেসরকারি সংস্থার হিসাবরক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর দুপুরে সাইকেলে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে কলাছড়ায় অহল্যাবাঈ রোডে একটি ট্রাক পিছন থেকে তাঁকে ধাক্কা মারে। অমিয় জানান, অপূর্বের মাথায় আঘাত ছিল বেশি। পিজি হাসপাতালে ১৭ দিন ভর্তি ছিলেন। প্রাণে বাঁচলেও শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে যান। কিছু মনেও রাখতে পারে না। মাথা যন্ত্রণা করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মাথায় রক্ত জমে ওই অবস্থা। ওষুধে যেটুকু কাজ হওয়ার, হবে। অস্ত্রোপচার করা যাবে না।

অন্য পক্ষের যুক্তিও ফেলনা নয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে চালকের ১০ বছর জেল এবং ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার আইন শুনে ক্ষুব্ধ ট্রাকচালক বুধন ভকত। আদতে বিহারের মুজফরপুরের বুধন থাকেন মগরায়। ২০১৮ সালে গৌহাটি থেকে ফাঁকা ট্রাক নিয়ে ফেরার সময় অসমের নলবাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মেরে তাঁর ডান পা বাদ যায়। বুধন আর ট্রাক চালাতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘‘নতুন আইন এখনই তুলে নিক সরকার। আমাদের মতো গরিব মানুষের অত জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে ট্রাক চালাতামই না। অন্য কাজ করতাম। চালকের দোষ থাকলে, শাস্তি হোক। জেলে পচে মরলে তো প্রাণ ফেরত দিতে পারবেন না। তাঁর পরিবার না খেতে পেয়ে মরবে। তা ছাড়া, মানুষজন অনেক সময়ে না দেখে রাস্তা পার হন। তবু দুর্ঘটনা ঘটলে সব দোষ চালকেরই।’’ একই বক্তব্য ট্রাকচালক দুলাল দত্তের।

বিহারের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ভগবান রায় শ্রীরামপুরে থাকেন। গত বছরের মহালয়ার দিন উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের কাছে সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি মোটরবাইক রাস্তার গার্ডওয়ালে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় তাঁর গাড়ি ঘেঁষে। গোপাল বলেন, ‘‘বাইকে এক মহিলা-সহ চার জন ছিলেন। ওঁদের অভিযোগ ছিল, আমি গার্ডওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়েছি। আমার দোষ নেই জানিয়ে পুলিশ আমাকে চলে যেতে বলে। কিছু দূর যেতেই কয়েকটি মোটরবাইকে লোকজন এসে আমার ট্রাকে বড় বড় ইট ছোড়ে। একটি ইট গাড়ির কাচ ভেঙে আমার কপালে লাগে।’’ ট্রাক মালিক সুরজিৎ ঘোষ জানান, গোপাল ওই ঘটনায় জ্ঞান হারান। গাড়ি ধানখেতে ঢুকে যায়। পুলিশ তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠায়। পরে পটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুরজিৎ বলেন, ‘‘গোপাল এখনও কাজে ফিরতে পারেননি। চিকিৎসার খরচ আমরা নিজেরা এবং আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেই চালাচ্ছি।’’ এমন ঘটনায় চালকের সুরক্ষা কে দেবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy