বুধবার ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। ছোট-বড় প্যান্ডেলে সেজে উঠেছিল বিভিন্ন এলাকা। সকাল থেকে মাইকে বেজেছে গান। তবে, বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে উন্মাদনা বাড়লেও, হাওড়ায় আগের মতো ঘটা করে আর শিল্পের দেবতার আরাধনা হয় না।
এক সময়ে হাওড়ায় ছিল বহু বড় কল-কারখানা। ইন্ডিয়া মেশিনারি, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, গেস্টকিন, রেমিংটন, ইন্দো জাপান, নিস্কর মতো বড় কারখানা। এগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ইছাপুর ও বেলিলিয়াস রোড শিল্পাঞ্চল। ছিল অসংখ্য ছোট ও মাঝারি কারখানা। তাই হাওড়া শিল্পাঞ্চলকে বলা হতো ‘শেফিল্ড অফ ইস্ট’। সেই কারখানাগুলিতে বিশ্বকর্মা পুজোও হত ঘটা করে। পুজোর দিন কারখানাগুলিতে আনন্দ আর হইহুল্লোড়ে মেতে উঠতেন শ্রমিকেরা। সকলে দুর্গাপুজোর বোনাসও পেয়ে যেতেন এ দিন। পুজোর পাশাপাশি সারাদিন চলত নাচ, গান, হুল্লোড়-সহ খাওয়া দাওয়া। কিন্তু সে দিন আর নেই। বড় কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাওড়ার শিল্পাঞ্চলে প্রভাব পড়েছে। কাজের অর্ডার না থাকায় ধুঁকছে সেগুলি। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় তাই মুখে হাসি নেই মালিক ও শ্রমিকদের। মালিকেরা জানিয়েছেন তাঁদের কাছে অর্ডার না থাকায় কারখানাগুলিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। ছোট কারখানাগুলি সাধারণত বড় কারখানাগুলির থেকে অর্ডার পেত। বড় কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে কারখানা তৈরি না হওয়ায় তাদের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওড়া তার শিল্পের গরিমা অনেক আগেই হারিয়েছে। তার সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্যাপন। তাই এ বছর অনেকেই ছোট প্রতিমা ও ঘট পুজো করছেন। তবে, এখনও আশায় বুক বাঁধেন এখান কার শ্রমিকেরা। বিশ্বকর্মা পুজোয় শ্মিক এবং মালিকদের একটাই প্রার্থনা, ‘শিল্পে ফিরে আসুক পুরনো সুদিন।’
হাওড়ার শিল্পের এই অবস্থা নিয়ে শাসক বিরোধী উভয় পক্ষ একে অন্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘আমরা শিল্পের অগ্রগতির জন্য কাজ করছি। তবে বাম আমলে কারখানা বন্ধ হতে শুরু করে ইউনিয়নের জন্য।” সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, “এই অবস্থার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র দু’জনেই দায়ী।” তিনি আরও জানান, ক্ষমতায় এলে তাঁরা শিল্পের উন্নতি করবেন। ফিরিয়ে আনবেন হাওড়ার শিল্পের সুদিন।