Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
Balagarh

অভাবকে হারিয়ে মাঠ দাপাচ্ছেন মাটির ঘরের মেয়ে

২০১০ সালে ছয় বছর বয়সে অঞ্জুর অ্যাথলেটিক্সে হাতেখড়ি প্রশিক্ষক পবন পণ্ডিতের কাছে জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে।

Anju Barman from Balagarh won gold medal

উজ্জ্বল: মেডেল হাতে অঞ্জু। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বজিৎ মণ্ডল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

বাংলাদেশে আমন্ত্রণমূলক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় জোড়া সোনা জিতলেন বলাগড় ব্লকের রুকেশপুর গ্রামের অঞ্জু বর্মণ। ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌড়ে সেরা হয়েছেন তিনি।

আঠেরো বছরের তরুণীটি র স্বপ্ন, দেশের হয়ে মাঠ কাঁপানো। অলিম্পিকের আসরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। কিন্তু, সেই স্বপ্নের সামনে প্রশ্নের হার্ডলস ঝুলিয়ে দেয় পরিবারের অভাব। টালির চালের বাড়িতে বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকেন অঞ্জু। বাবা কমল বর্মণ ছ’মাস ফুলের নার্সারিতে শ্রমিকের কাজ করেন ২০০ টাকা রোজে। চার মাস প্যান্ডেলের কাজ করেন দৈনিক আড়াইশো টাকা মজুরিতে। বাকি দু’মাস কাজ থাকে না। মা অপর্ণা ফুলের নার্সারিতে কাজ করেন। তাঁর রোজগার দিনে ১৫০ টাকা।

অঞ্জু বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। সংসার চালিয়ে তাঁর পড়া এবং খেলার খরচ সামলাতে পারেন না বাবা-মা। অঞ্জুর পড়া এবং খেলার সরঞ্জাম কিনতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন কোচ পবন পণ্ডিত। কমলের আক্ষেপ, ‘‘মেয়েটা ভাল দৌড়চ্ছে। কিন্তু, আমাদের সংসারের যা হাল, মেয়ের দৌড় কবে থেমে যাবে, সেটাই ভাবি। খেলার দামি জুতো কিনে দিতে পারি না। ভাল খাবার-দাবার পর্যন্ত দিতে পারি না।’’

২০১০ সালে ছয় বছর বয়সে অঞ্জুর অ্যাথলেটিক্সে হাতেখড়ি প্রশিক্ষক পবন পণ্ডিতের কাছে জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের মহকুমাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় দৌড়ে সোনা পান। এর পরে জেলা থেকে রাজ্যস্তরে দাপিয়ে খেলেছেন। ২০১৭ সালে রাজ্য বিদ্যালয় ক্রীড়া পর্ষদের প্রতিযোগিতায় জোড়া সোনা জেতেন। পরের বছর রাজ্য স্তরেও জোড়া স্বর্ণপদক পান। শুক্রবার বাংলাদেশের যশোরে আমন্ত্রণমূলক প্রতিযোগিতায় তাঁর দৌড় মন কেড়েছে অনেকের। সেখানে দলগত ভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই রাজ্য থেকে যাওয়া অঞ্জুদের দল।

পবন বলেন, ‘‘ছোট থেকে ওর মধ্যে প্রতিভা দেখেছি। ঘষেমেজে নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। অনুশীলনে ফাঁকি দেয় না। তবে, ওর পরিবার এত অভাবী, খেলার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করছি।’’ বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা চাই, অঞ্জু আরও নাম করুক। মেয়েটা সত্যিই লড়াকু।’’

অঞ্জু বলেন, ‘‘সরকারের আর্থিক সাহায্য পেলে আরও এগিয়ে যাব।’’

সরকারের কানে পৌঁছবে প্রত্যন্ত গ্রামের টালির চালের মাটির ঘরের মেয়ের কথা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Balagarh Indian Athlete
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE