Advertisement
E-Paper

কর্মী নেই, বিপাকে চালকল

নোটবন্দি এবং জিএসটি-র ধাক্কায় আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল ছোট শিল্প-কারখানার। লকডাউনে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে শ্রমিকদের। কবে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি, তার কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরাও। কেমন আছে ওই সব শিল্প-কারখানার শ্রমিক-মালিকেরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী অবশ্য মনে করছেন এই সঙ্কট থাকবে না।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:০৩
বন্ধ রয়েছে চালকল। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

বন্ধ রয়েছে চালকল। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

কাজ কম নয়।

ধান বওয়া, সিদ্ধ করা, বস্তায় ভরা, গাড়িতে তোলা, ব্রয়লার-সহ নানা যন্ত্র চালানো— কত কাজ! করবে কে? হুগলির অধিকাংশ চালকলে শ্রমিক প্রায় নেই-ই। করোনা আতঙ্কে সকলেই এখন বাড়িতে। ফলে, বাজারে চালের জোগান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

রাজ্যের অন্যতম ধান উৎপাদক জেলা হুগলি। এখানে চালু চালকলের সংখ্যা ১১৫। তার মধ্যে আরামবাগ মহকুমাতেই রয়েছে ৯০টি। কিন্তু শ্রমিক সঙ্কটে সরকারকে বা জেলার বাজারগুলিতে চাল জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চালকল-মালিকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই সঙ্কট আরও কিছুদিন চললে বাজারে চালের আকাল দেখা দেবে।

জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী অবশ্য মনে করছেন এই সঙ্কট থাকবে না। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত অসুবিধা কিছু নেই। আমাদের সঙ্গে যে ৭৫টি মিল কাজ করছে, সব ক’টিই খোলা আছে। চালও পাচ্ছি। শ্রমিকের অভাব নিয়ে চালকল-মালিকদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আমরা অনেকবার আলোচনা করেছি। শ্রমিকদের যাতে আনা যায় সে সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।”

সরকারি ছাড়পত্রতেও অবশ্য সঙ্কট কাটেনি বলে দাবি চালকল-মালিকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, গাড়ির নম্বর ধরে শ্রমিকদের আনার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু করোনা-আবহে শ্রমিকেরা নিজেই আসতে চাইছেন না। তাঁদের পরিবার থেকেও ছাড়া হচ্ছে না। গোঘাট-২ ব্লকের বেলেপাড়ার চালকল-মালিক জয়ন্ত মল্লিক বলেন, “শ্রমিকের অভাবে এমনিতে চাল উৎপাদন খুব কম হচ্ছে। তার উপর অন্য জেলার গুদামে চাল দিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। হয়রানিও হচ্ছে। ফলে, পাঠাতে দেরিও হচ্ছে। আমরা চাইছি সরকার বা তাদের ডিস্ট্রিবিউটর এখান থেকে চাল তুলে নিয়ে যাক। আমরা যে ভাবে হোক উৎপাদন করে দেব।’’

হুগলির ৭৫টি চালকল চাষিদের কাছ থেকে কেনা ধান চাল করে সরকারকে দেয় বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর। সেই চালই রেশনে দেওয়া হয়। লকডাউনের জেরে এখন গণবণ্টন ব্যবস্থায় জোর দিয়েছে সরকার। ফলে, রেশনে চালের জোগান স্বাভাবিক রাখতে হবে চালকলগুলিকে। তা নিয়েই বেশি চিন্তিত মালিকেরা।

আরামবাগ মিল-মালিক সংগঠনের সভাপতি সত্যনারায়ণ মাজি বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলা বা ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকেরা অধিকাংশ চলে গিয়েছেন। স্থানীয় কিছু শ্রমিককে নিয়ে সামান্য কাজ যাচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন দু’শিফটে কাজ হত, সেখানে কোনও মতে একটি শিফটে কেউ সপ্তাহে দু’দিন মিল চালাচ্ছেন, কেউ তিন দিন।”

চালকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক-একটিতে গড়ে ২৫-৩০ জন শ্রমিক লাগে। তা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গার গুদামে চালের বস্তা পৌঁছনোর লোক, গাড়িরও প্রয়োজন। কিন্তু লোক এবং গাড়ির অভাবে নির্দিষ্ট দিনের অনেক পরে চাল যাচ্ছে। সত্যানারায়ণবাবুর মিল থেকেই গত ৪ এপ্রিল উত্তর ২৪ পরগনার কাশীপুর গুদামে চাল পাঠানো হয়। সেই চাল শনিবার নামানো হয়েছে।

সঙ্কট এখনই কাটছে না। তা সত্ত্বেও করোনা মোকাবিলায় তাঁরা সরকারকে সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করছেন বলে চালকল-মালিকেরা জানিয়েছেন।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy