Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নজরদারি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন, মাছবাজার ভরছে ছোট ইলিশে

দাম ঘোরাফেরা করছে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

বাজার: দেদার বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ। উলুবেড়িয়া বাজার।

বাজার: দেদার বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ। উলুবেড়িয়া বাজার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

কোনওটার ওজন সাকুল্যে ২০০ গ্রাম। কোনওটা ৩০০ গ্রাম বা আর একটু বেশি।

সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ বারেও হাওড়া হুগলির বিভিন্ন বাজারে দেদার বিকোচ্ছে ছোট (৫০০ গ্রামের কম) ইলিশ। দাম ঘোরাফেরা করছে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

হুগলির কুন্তীঘাট, বলাগড়, সোমরা, গুপ্তিপাড়ায় গঙ্গায় ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে। তা স্থানীয় বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। ক’দিন আগেও শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন মাছ বাজারে ছোট ইলিশ মিলছিল। হাওড়ার নিমদিঘি, বাগনান, আমতা, উদয়নারায়ণপুর-সহ জেলা জুড়েই রমরমা ছোট ইলিশের।

নজরদারির অভাবেই ছোট ইলিশে বাজার ছেয়েছে বলে মানছেন বিক্রেতাদের একাংশ। নিমদিঘি বাজারে ইলিশ বিক্রি করেন গোলক মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘বড় ইলিশের দাম বেশি। তাই ৫০০ গ্রামের নীচের ওজনের ইলিশের চাহিদা রয়েছে। ফলে, জোগানও রয়েছে। ছোট ফাঁদের জাল ব্যবহার পুরোপুরি রোখা যায়নি। ছোট ইলিশ ধরা পুরোপুরি বন্ধ না-হলে সমস্যা মিটবে না।’’

শ্রীরামপুরের মাছ বাজার।

দুই জেলাতেই এ জন্য প্রচার, এমনকী, সচেতনতা শিবিরও আয়োজন করা হয় বলে মৎস্য দফতরের দাবি। হাওড়া জেলা মৎস্য দফতরের দাবি, হাওড়া মাছবাজার-সহ জেলার সর্বত্র বাজারে হানা দেওয়া হয়। ছোট ইলিশ বিক্রেতাদের ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জরিমানাও করা হয়। তা সত্ত্বেও কেন ছোট ইলিশ বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না, এ প্রশ্ন থাকছেই।

বলাগড়ের গঙ্গায় অন্তত কুড়ি বছর ধরে মাছ ধরছেন বলাই ক্ষেত্রপাল। তিনি বলেন, ‘‘মাঝিমাল্লা, জেলেরা তো ছোট ইলিশ ধরে খয়রা মাছ বলে বিক্রি করছেন। আমাদের তো সরকারি প্রচার বা গঙ্গায় নজরদারি চোখে পড়ে না।’’ হুগলি জেলা মৎস্য দফতরের কর্তারা মানছেন, পরিকাঠামোর অভাবে সে ভাবে নজরদারি করা যায় না। একই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন, শুধু নজরদারি বা অভিযানেই কাজ হবে না, শাস্তির ব্যবস্থাও জরুরি।

ওই দফতরের সহ-অধিকর্তা পার্থসারথি কুণ্ডু বলেন, ‘‘গঙ্গা থেকে ছোট ইলিশ উঠছে, এটা ঠিকই। অভিযান চালানো হলে দু’-চার দিন বন্ধ থাকে। তার পরে পরিস্থিতি যে কে সে-ই। আমরাও চিন্তিত। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। পুলিশের সাহায্যও চাওয়া হবে।’’

কিন্তু শুধু গঙ্গার ছোট ইলিশেই কি বাজার ছেয়েছে?

দুই জেলার মাছ ব্যবসায়ীদের দাবি, দিঘা বা ডায়মন্ড হারবার থেকে আসা ছোট ইলিশই বেশি মিলছে বাজারে। সেখানে লাগাম টানার কথাও বলছেন কেউ কেউ। তবে, এটা ঠিক, এক সময় হুগলির ত্রিবেণী থেকে বলাগড় পর্যন্ত গঙ্গায় প্রচুর ইলিশ মিলত। কিন্তু সেই সুদিন আর নেই। বিশেষজ্ঞেরা এর নেপথ্যে গঙ্গাদূষণ, লাগামহীন ভাবে ছোট ইলিশ ধরার প্রবণতাকে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে গঙ্গা থেকে ইলিশ উবে যাবে। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘কল্যাণী এবং ধুলিয়ানে গঙ্গায় ইলিশের ‘ব্রিডিং জোন’ (প্রজনন ক্ষেত্র) আছে। কিন্তু দূষণের জন্য জলে ইদানীং অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষত ছোট ইলিশের ক্ষেত্রে।’’

অতঃকিম?

দুই জেলার মৎস্য কর্তারা সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন। হাওড়ার ওই দফতর জানিয়েছে, প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের মধ্যে প্রচার চালানো হয় তাঁরা যেন ইলিশ ধরতে না যান। কারণ ওই সময়েই ছোট ইলিশ ধরা হয়। বদলে ওই সময়টুকুর জন্য মৎস্যজীবীদের বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থাও করা হয়। হুগলির এক মৎস্য কর্তা জানান, প্রতি বর্ষার মরসুমেই বলাগড় এলাকায় সেমিনার করা হয়। ওখানে প্রচুর মৎস্যজীবী থাকেন। ওখান থেকে সমুদ্রেও বহু মানুষ মাছ ধরতে যান।

এত কিছুর পরেও বাজারগুলিতে যে ভাবে ছোট ইলিশের রমরমা, তাতে সরকারি পদক্ষেপের কার্যকারিতার সাফল্য নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ilish Fish Hilsa fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE