সাংগঠনিক রদবদল করে গত শুক্রবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তর কলকাতা এবং বীরভূম জেলায় সভাপতিপদ তুলে দিয়ে কোর কমিটি গঠন করেছেন। আর মঙ্গলবার সেই একই পথে হেঁটে দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির তমলুক এবং দুর্গাপুরের সংগঠনের ক্ষেত্রেও কোর কমিটি ঘোষণা করা হল। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই যে এই দু’টি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এর আগে তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন চন্দন দে। তাঁকে কোর কমিটিতেই রাখা হয়নি। মোট ন’জন সদস্য এ বার থেকে ওই জেলা সংগঠনের দেখভাল করবেন। অন্য দিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলা আইএনটিটিইউসির সংগঠন ভাঙা না-হলেও, পৃথক ভাবে দুর্গাপুরের জন্য কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও পশ্চিম বর্ধমান জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি তথা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটকের জায়গা হয়নি ওই কমিটিতে। দুর্গাপুর সংগঠনের কোর কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন তৃণমূলের ১২ জন শ্রমিকনেতা।
আরও পড়ুন:
এই দুই সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে এমন বড়সড় বদল প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, এ বছরের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পরে একটি শিল্প সংক্রান্ত বৈঠকে হলদিয়া এবং দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে দলের শ্রমিক সংগঠনের কাজকর্ম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে দলের শ্রমিক সংগঠন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তার পরেই দলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছিল যে, পশ্চিম বর্ধমান এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলায় আইএনটিটিইউসির সভাপতিপদ-সহ গোটা কমিটিতেই বদল আনা হতে পারে। শেষমেশ নতুন সভাপতি ঘোষণার বদলে কোর কমিটি গঠন করে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হল সংগঠনের রাজ্য সভাপতিকে।
দায়িত্ব পাওয়ার পরেই কোর কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা জানিয়েছেন ঋতব্রত। বুধবার হলদিয়া এবং বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে গিয়ে কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। দু’টি কোর কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ঋতব্রত বলেন, ‘‘দল যখন দায়িত্ব দিয়েছে, সেই দায়িত্ব পালন করতেই হবে। আমি সাধারণত মাসে দু’বার করে তমলুক এবং দুর্গাপুরে সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখতে যেতাম। কিন্তু দল আমাকে কোর কমিটির মাথায় বসানোর পর মাসে তিন বার করে সেখানে সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে যেতে হবে।’’ তবে দু’টি ক্ষেত্রেই সভাপতিদের বাদ দিয়ে কেন কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ঋতব্রত।
এর আগে উত্তর কলকাতা এবং বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটি তৈরি করা হয়। সেখানে কমিটিতে প্রাক্তন সভাপতিরা রয়েছেন। বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটিতে রয়েছেন প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর উত্তর কলকাতা কোর কমিটির চেয়ারপার্সন করা হয়েছে সাংসদ তথা প্রাক্তন সভাপতি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সভাপতিপদ তুলে কোর কমিটির গঠন করে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব কমাতে চেয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব, এমনটাই মত দলের একাংশের। এ ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও অন্যতম ভূমিকা নিয়েছে বলেই জানাচ্ছে তৃণমূল ভবনের একটি সূত্র।