বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি পাঠালেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) একমাত্র বিধায়ক তথা সংগঠনের চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকি। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট রয়েছে। তার মাস ছয়েক আগে এই চিঠি বাংলা রাজনীতিতে যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ইমেল মারফত বিমানকে চিঠিটি দিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার করে নিলেও সেই চিঠিতে কোন বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, তা জানাতে চাননি নওশাদ। তবে সূত্রের খবর, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করতে চেয়ে এই চিঠিটি দিয়েছেন তিনি।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএফ একজোট হয়ে লড়াই করেছিল। সংযুক্ত মোর্চার নাম দিয়ে লড়াই করে এই জোট পর্যুদস্ত হয়েছিল। কেবলমাত্র ভাঙড় আসনে নওশাদ ছাড়া, সংযুক্ত মোর্চার আর কোনও প্রার্থী জিততে পারেননি। ২০২১ সালের নির্বাচনের পর আর এই তিন রাজনৈতিক শক্তিকে একসঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যায়নি। রাজ্যের কয়েকটি উপনির্বাচন এবং ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়াই করেছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। একক ভাবে লড়াই করে লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় ফল হয়েছিল আইএসএফের। তাই নওশাদের দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আবার জোট করে লড়াই করতে চায় ভাইজানের দল। তাই ওই চিঠিতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের কাছে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ফের পরস্পরের হাত ধরে লড়াই করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তবে, নওশাদ জেনেছেন ইমেল করে পাঠানো চিঠিটি হাতে পাননি বিমান। তাই মনস্থির করেছেন, সেপ্টেম্বর মাসেই নিজের হাতে ওই চিঠিটি নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে গিয়ে বিমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। সেই সাক্ষাতেই ওই প্রবীণ রাজনীতির হাতে আবেদনপত্রটি তুলে দিয়ে আইএসএফের রাজনৈতিক ভাবনার কথা মৌখিক ভাবে জানিয়ে আসবেন তিনি। আইএসএফ নেতৃত্বের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বামফ্রন্টের পাশাপাশি কংগ্রেসের সঙ্গেও ফের জোটে আগ্রহী নওশাদ। তাই বিমানের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারকেও লিখিত জোটবার্তা পাঠাতে চান তারা।
বাংলার রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, ফের সংযুক্ত মোর্চা গঠিত হলে তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ফিরে পাওয়া। রাজ্যে কংগ্রেস ও আইএসএফের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে। রাজ্য বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেলেও, মালদহ মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুরের সংখ্যালঘু মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্য কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে তার প্রমাণও মিলেছে। মালদহ দক্ষিণ আসন জেতার পাশাপাশি, রায়গঞ্জ, মালদা উত্তর, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর ও জঙ্গিপুর আসনে ভাল ভোট পেয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। সে ভাবেই, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি হাওড়া, হুগলির মতো জেলার সংখ্যালঘুদের মধ্যে বেশ প্রভাব রয়েছে ফুরফুরা শরিফের, যে ফুরফুরা শরিফের উত্তরাধিকারী নওশাদ। সেই সুবাদে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়াই করার প্রথম পদক্ষেপ করেছেন সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক।