— “আমি জিন্দা আছি গো মা...পাঁচটা গুলি লেগেছিল জানো, পিঠে, পেটে, ডান হাতে, বাঁ পায়ে। মালাই চাকিটা ভেঙেই গেছে। তবু বেঁচে আছি মা...’’ ফোনটা প্রথম ধরেছিলেন আখতারা বিবি, জহিরের মা। কান্নায় ভেঙে পড়া মায়ের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিতেই, নলহাটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, জহিরুদ্দিনের ভাই আব্দুল আহাদ শুনেছেন,
—‘হুড়মুড় করে জনা চারেক লোক উপরে উঠে এল, সব্বার মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা। ভয় পাব কী, বুঝতেই পারিনি, কী ঘটতে চলেছে। তার পর আমাদের সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে বলে হাতগুলো পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল।’ দাদার মুখে সেই দুঃসহ সন্ধের অনুপুঙ্খ বর্ণনায় আহাদ শুনেছেন— ‘ওদের খুব তাড়া ছিল জানিস, দলের এক জন হাত বাঁধতে দেরি করছিল বলে অন্যরা তাকে বেজায় গালমন্দ করল, একেবারে কাঁচা গালাগাল। তার পর আমাদের ঠেলতে ঠেলতে নামিয়ে আনল এক তলায়। তখনও বুঝিনি গুলি করে মারবে, ভাবছিলাম হয়তো আমাদের ধরে নিয়ে যাবে কোথাও, তার পর মারধর করবে। কিন্তু একেবারে যে মেরে ফেলবে, নাহ ভাবিনি। নীচে নামিয়ে রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে একটা খোলা জায়গায় নিয়ে গেল আমাদের। তার পর লাইন করে দাঁড় করিয়ে নিজেদের মধ্যে কী সব যেন কথা হল ওদের। আমি ভাবছিলাম হয়ত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে ওরা, কয়েক সেকেন্ড, কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছিল ঘণ্টা কাবার হয়ে যাচ্ছে। আমার পাশে কামিরুদ্দিন ভাই, এক বার তাঁকে দেখার চেষ্টা করলাম, মুখ ঘুরিয়েছি অমনি...।’
আহাদ বলছেন, ‘‘দাদা মুখ ঘোরাতেই ওদের মনে হয়েছিল দাদা’রা বোধহয় পালানোর চেষ্টা করছে, আর তখনই ছুটে আসতে তাকে গুলি।’’ ভাইকে জহিরুদ্দিনও জানান— ‘প্রথম গুলিটা লাগে পেটে, একটু ঝুঁকে পড়েছিলাম তাতে তারপর পায়ে হাতে গুলি লাগতেই পড়ে যাই। ততক্ষণে অন্য দিক থেকেও গুলি ছুটতে শুরু করেছে। আমি পড়ে যেতেই আমার উপর একে একে পড়তে থাকে কামিরুদ্দিন ভাই, রফিক শেখের লাশ... আর কিছু মনে ছিল না। ভেবেছিলাম আমারও ইন্তেকাল হয়ে গেল!’
‘ইন্তেকাল’ নয়, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জহিরুদ্দিন বিপন্মুক্ত। তবে পুলিশি জেরার পরে তাঁকে ছাড়া হবে।