Advertisement
০১ মে ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

‘প্রাথমিকের ৪২ হাজার প্রার্থীর প্যানেল ১০ দিনে জমা দিন’, পর্ষদকে নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

২০১৪ সালের টেটে উত্তীর্ণদের প্যানেল প্রকাশের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে পৃথক মামলা করেন মৌটুসি রায়-সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী। সেই মামলাতেই এই নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০১
Share: Save:

১০ দিনের মধ্যে প্রাথমিকের ৪২,৯৪৯ প্রার্থীর প্যানেল প্রকাশ করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে ২০১৪ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) সংক্রান্ত মামলায় ওই নির্দেশ দেন বিচারপতি। আগামী ১৫ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

২০১৪ সালে টেট উত্তীর্ণ হয়েছিলেন প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী। ২০১৬ সালে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। টেট উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল ৪২,৯৪৯ জনকে। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক ‘ত্রুটি’ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ২০২২ সালে হাই কোর্টে মামলা করেন প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী। অভিযোগ ওঠে, ওই ৪২,৯৪৯-এর মধ্যে ৩২,০০০ প্রার্থী ‘অপ্রশিক্ষিত’। এ ছাড়াও তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক ‘অনিয়ম’ হয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে ইন্টারভিউ এবং ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ না নিয়েই চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

ওই মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কয়েক জন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষক (ইন্টারভিউয়ার)-এর বয়ান রেকর্ড করেন। তার পরেই মামলাকারীদের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে মেনে নিয়ে গত ১২ মে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার একাধিক অসঙ্গতি উল্লেখ করে রায় দেন। এক ধাক্কায় বাতিল হয়ে যায় রাজ্যের ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি। তিনি জানান, পরের চার মাস ওই ৩২,০০০ শিক্ষক পার্শ্বশিক্ষকের (প্যারাটিচার) মতো বেতন পাবেন। তিন মাসের মধ্যে পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তাতে অংশ নিতে পারবেন ওই ৩২,০০০ চাকরিচ্যুতরা। নতুন করে চাকরি দিতে হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের ওই রায়ের ফলে ৩২,০০০ চাকরিচ্যুত শিক্ষক শুধু নন, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের জন্যও নিয়োগে অংশ নেওয়ার দরজা খুলে যায়। অর্থাৎ, ওই নির্দেশ মোতাবেক প্রায় এক লক্ষের বেশি প্রার্থীকে নিয়ে পর্ষদ আবার নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় একক বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় পর্ষদ এবং চাকরিচ্যুতদের একাংশ। গত ১৯ মে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আপাতত ওই ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে না। তবে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁদের অংশ নিতে হবে। সেখানে সফল হলেই চাকরি থাকবে, নইলে নয়। অর্থাৎ, ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের ফলে চাকরি বহাল থাকে ৩২,০০০ জনের।

এরই মধ্যে টেট উত্তীর্ণদের প্যানেল প্রকাশের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে পৃথক মামলা করেন মৌটুসি রায়-সহ কয়েক জন চাকরীপ্রার্থী। মৌটুসিদের দাবি ছিল, তাঁরাও চাকরি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মেধাতালিকা স্পষ্ট না হওয়ায়, নিয়োগ পাননি। এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছেন, ৪২,৯৪৯ চাকরি প্রাপকের ওই প্যানেল আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। পর্ষদের তরফে জানানো হয়, প্যানেল আগেই আদালতের নির্দেশে প্রকাশ করেছে। পর্ষদের ওই বক্তব্যের পরে ‘প্রকাশিত’ প্যানেলের ‘হার্ড এবং সফ্‌ট কপি’ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারীদের তরফে আদালতে আবেদন জানানো হয়, প্যানেলে স্থান পাওয়া টেট উত্তীর্ণদের সম্পর্কে ‘বিস্তারিত তথ্য’ (নাম, জেলা, স্পষ্ট ভাবে বিষয়ভিত্তিক নম্বরের উল্লেখ-সহ) যেন প্রকাশ করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE