Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Medical College Admission Case

‘স্থগিতাদেশের প্রমাণ কই’? মেডিক্যাল নিয়ে সিবিআইকেই তদন্ত এগোনোর নির্দেশ বিচারপতির

মেডিক্যাল মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশনামাটি দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জমা দিতে বলেছিলেন বিচারপতি। তার পরে বিকেলে মামলাটি আবার ওঠার কথা ছিল তাঁর বেঞ্চে।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৩
Share: Save:

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির মামলায় সিবিআই তদন্ত হবে কি হবে না? দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও কলকাতা হাই কোর্টে মিলছে না জবাব। বুধবার বিকেলে আবার সিবিআইকে এই মামলায় এফআইআর দায়ের করতে বললেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, বিচারপতির ওই নির্দেশের পর আবার ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য।

বুধবার দুপুরে এই মামলায় প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাল্টা রাজ্য সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিক ভাবে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বিচারপতির নির্দেশে। কিন্তু তার এক ঘণ্টার মধ্যে আবার বিচারপতি সিবিআইকে বললেন, তদন্তের কাজ শুরু করতে। কারণ ডিভিশন বেঞ্চ যে তাঁর নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে তার কোনও প্রমাণ নেই।

মেডিক্যাল মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশনামাটি দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জমা দিতে বলেছিলেন বিচারপতি। তার পরে বিকেলে মামলাটি আবার ওঠার কথা ছিল তাঁর বেঞ্চে। সেই মতো বুধবার বিকেলে মামলাকারীর আইনজীবী কেয়া সূত্রধর বিচারপতির এজলাসে আসেন। তিনিই বিচারপতিকে জানান, রাজ্যের তরফে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে মৌখিক আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনেই বিচারপতি পাল্টা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ আছে? তা হলে সেটা আমাকে দেখান। না হলে বিচারকক্ষের লাইভ স্ট্রিমিং দেখান।’’

বিচারপতির এই নির্দেশ পালন করতে পারেননি মামলাকারীর আইনজীবী। রাজ্যের আইনজীবীও ওই নির্দেশের কোনও লিখিত নথি দেখাতে পারেননি আদালতকে। এর পরেই বিচারপতি বলেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের কোনও প্রমাণ নেই। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ বা মামলার কপি না থাকে তা হলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য?’’ এর পরেই সিবিআইকে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ভর্তিতে অনিয়ম হয়েছে জানিয়ে মামলা হয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। বুধবার সেই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্যের আইনজীবীকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের পুলিশ তো শাহজাহানকেই ধরতে পারেনি। রাজ্যের পুলিশের উপর তাই এই আদালতের আস্থা নেই।’’

আগে যা হয়েছে

বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠেছিল রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত মামলা। সেই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। এজলাসে বসেই তিনি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত করবে সিবিআই। এই ঘটনায় যদি কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়ে থাকে, তবে তা-ও সামনে আসা দরকার।’’

বিচারপতির এই নির্দেশের পরেই রাজ্যের তরফে তীব্র আপত্তি তোলেন রাজ্যের এজি। কিন্তু বিচারপতি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘শাহজাহানকে আপনাদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে? রাজ্যটা দিনে দিনে কয়েক জন দুর্নীতিগ্রস্তের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। অথচ এত কিছুর পরেও পুলিশের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা চোখে পড়ছে না। এ রাজ্যের পুলিশ কর্তৃপক্ষের উপর এই আদালতের কোনও আস্থা নেই। দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার তাই সিবিআইকেই দেওয়া যথাযথ মনে করছে আদালত।’’ পাশাপাশিই সিবিআইকে বিচারপতি জানান, সিবিআই তদন্তের নির্দেশনামা দুপুর আড়াইটার মধ্যে সিবিআইকে দিতে হবে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে।

এমবিবিএস পরীক্ষায় ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেছিলেন ইতিশা সোরেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘‘তফসিলি জনজাতি না হওয়া সত্ত্বেও অনেক পড়ুয়া ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ওই সরকারি কলেজের তালিকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেরও নাম রয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির এই মামলাটি গত বছর থেকেই চলছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। চিকিৎসক হওয়ার প্রশিক্ষণে অযোগ্যরা গুরুত্ব পেয়েছেন জেনে আদালতেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারী আদালতে যে ৫০ জনের নাম জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের শংসাপত্র খতিয়ে দেখতে বলেন বিচারপতি। গত ১৬ অক্টোবর ওই ৫০ জনকে মামলায় যুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যের স্ক্রুটিনি কমিটিকে বলেছিলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।

৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই খতিয়ে দেখার কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন বিচারপতি। গত ১৪ ডিসেম্বরে রাজ্য জানায়, এমন ১৪ জন প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করেছিলেন। বিচারপতি দু’সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে তদন্ত শুরু করতেও বলেছিলেন বিচারপতি। বুধবার এই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE