পাকিস্তানের চর সন্দেহে গ্রেফতার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা গত মাসে বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে এসেছিলেন? তিনি তরুণ সিপিএম নেতা সৃজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন? সৃজন হাত রেখেছিলেন তাঁর বাঁ কাঁধে?
সোমবার সন্ধের পর থেকে নানাবিধ বয়ান সম্বলিত একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। যাকে খণ্ডাতে পাল্টা ময়দানে নামতে হয়েছে বামেদেরও। ‘নকল’ সম্পর্কে সাবধান করতে ‘আসল’ ছবিও ছড়িয়ে পড়তে থাকে ঝড়ের বেগে। মঙ্গলবার ‘নকল ছবি’ এবং ‘অপপ্রচার’ নিয়ে কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেছেন সৃজন। সে দিন ব্রিগেডে যে তরুণীর ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ছোঁয়ায় জ্যোতি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই পূর্বাদ্রি পোদ্দারও বিকেলে বরাহনগর থানায় যান। রাতে ফের লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যাবেন।
পূর্বাদ্রি সরোজিনী নায়ডু কলেজের প্রাক্তনী। আপাতত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বরাহনগরের বাসিন্দা এই তরুণী সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের কর্মী। তিনি কি ইউটিউবার জ্যোতিকে চিনতেন? পূর্বাদ্রির কথায়, ‘‘আমি কোনওদিন ওঁর ভিডিয়ো দেখিনি। সোমবার অসুস্থ থাকায় দিনভর আমার ফোন ছিল এরোপ্লেন মোডে। রাত্রি পৌনে ৯টা নাগাদ এক শুভাকাঙ্খী গোটা বিষয়টি জানান। কিন্তু তত ক্ষণে ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।’’ পূর্বাদ্রির মা সীমা দাস বরাহনগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক আক্রমণে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু মেয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটায় ওর মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ওকে বুঝিয়েছি, রাজনৈতিক ভাবেই এই লড়াই লড়তে হবে।’’
আরও পড়ুন:
গত ২০ এপ্রিল বামেদের ব্রিগেডে গিয়েছিলেন পূর্বাদ্রি। সে দিনই সৃজনের সঙ্গে ছবিটি তোলেন। ২৩ এপ্রিল তা পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। পূর্বাদ্রির ছবিতে এআই মিশিয়ে যে ছবি তৈরি করা হয়েছে, তার সঙ্গে আসল ছবি আলাদা করতে গিয়ে অনেকেরই কালঘাম ছুটছে। বামেদের অনেকেই একান্ত আলোচনায় মানছেন, মুখের আদলে মিল রয়েছে বলেই কারুকার্য করতে সুবিধা হয়েছে। পূর্বাদ্রির বক্তব্য, ‘‘মুখের আদলে মিল রয়েছে কি না জানি না, তবে যে বা যারা কাজটি করেছে, তারা নিখুঁত ভাবে করেছে।’’ মূল ছবির সঙ্গে ‘নকল’ ছবিটির পার্থক্য খুবই সামান্য। মাথায় রাখা সানগ্লাস, পোশাক, প্রেক্ষাপট— সবই এক রকম। ফলে এক ঝটকায় ধরে ফেলা মুশকিল।
গোটা ঘটনা লিখিত ভাবে জানাতে মঙ্গলবার বিকালে বরাহনগর থানায় গিয়েছিলেন পূর্বাদ্রি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা-ও। কিন্তু সাইবার সেলের কেউ না-থাকায় অভিযোগ গৃহীত হয়নি। সীমা জানিয়েছেন, রাত্রি ৮টা নাগাদ তাঁদের যেতে বলা হয়েছে। সৃজন অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন। তরুণ বাম নেতার কথায়, ‘‘যুক্তিতে এঁটে উঠতে না-পেরে এখন এই সব মিথ্যা, নকলের আশ্রয় নিতে হচ্ছে বাম বিরোধীদের।’’
পূর্বাদ্রির গোটা পরিবারই বরাহনগর এলাকায় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একটা সময়ে এই বরাহনগর থেকেই ভোটে জিততেন অধুনা প্রয়াত সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। আপাতত অন্য এক জ্যোতিকে নিয়ে বিড়ম্বনায় বরাহনগরের বামপন্থী পরিবার!