Advertisement
১০ মে ২০২৪
Teacher Recruitment Scam Case

সোমে সিবিআইয়ের তলবে গরহাজির ‘কালীঘাটের কাকু’, পাঠালেন ব্যাঙ্কের নথিপত্র, বললেন, নথিই চাওয়া হয়েছে

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের সূত্রেই ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা উঠে এসেছিল। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছিল, ‘কালীঘাটের কাকু’র আসল নাম সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।

image of kalighater kaku Sujoy Krishna ghosh

প্রথম বার হাজিরা দিলেও সোমবার তিনি নিজে হাজিরা দেননি। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪২
Share: Save:

সিবিআই তাঁকে সমন পাঠিয়েছিল। হাজিরা দিতে বলেছিল সোমবার। কিন্তু ‘কালীঘাটের কাকু’ সোমবার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে গেলেন না। বরং আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাঙ্কের নথিপত্র পাঠালেন গোয়েন্দা দফতরে। জানালেন, তাঁর কাছে নথিই চাওয়া হয়েছে।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের সূত্রেই ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা উঠে এসেছিল। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছিল, ‘কালীঘাটের কাকু’র আসল নাম সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সেই সুজয়কেই দ্বিতীয় বার তলব করেছিল সিবিআই। প্রথম বার হাজিরা দিলেও সোমবার তিনি নিজে হাজিরা দেননি। বদলে আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। সুজয় জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি আইনজীবীকে দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুজয়ের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু’। তাঁর আইনজীবী নাজমুল আলম সরকার জানিয়েছেন, সশরীরে হাজির হওয়ার নোটিস আসেনি তাঁর মক্কেলের কাছে। যে নথি চাওয়া হয়েছিল, দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যা নথি চেয়েছিল সিবিআই, দিয়ে দিয়েছি। ব্যাঙ্কের নথি চেয়েছিল, আমরা দিয়েছি। সশরীরে হাজিরার জন্য কোনও নোটিস তাঁর কাছে যায়নি। শুধুই নথি চাওয়া হয়েছিল। যখন ডাকবে সিবিআই, নোটিস পাঠালে সেই অনুযায়ী হাজিরা দেবেন।’’

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কুন্তল নাকি আশ্বাস দিয়ে বলতেন, ‘‘কালীঘাটে কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল দলপতি ও তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই কালীঘাটের ‘কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির মামলার তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি। তার পর থেকে আতশকাচের তলায় রয়েছেন সুজয়।

যদিও কুন্তল দাবি করেছেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে চর্চা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন। তাপস এবং কুন্তলের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণে রহস্য আরও বেড়েছে। সুজয় নিজেও সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছিলেন, তাঁকে কেন ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে তো সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’

সুজয় আরও দাবি করেন, তাঁর ‘সাহেব’, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯ থেকে তিনি অভিষেকের অফিসে চাকরি করছেন। সুজয় আরও বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই আমার সাহেবকে ছোঁবে। কারণ তাঁর নাম কেউ করতে পারবেন না। তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবে না, তাঁর সঙ্গে কেউ ফোনে কথা বলতে পারবেন না। আমার কাছ অবধি এসে থেমে যেতে হচ্ছে।’’

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও জানিয়েছিলেন সুজয়। পাশাপাশি কাউকে চাকরি করিয়ে দেননি বলে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইঝির ৪১ বছর বয়স। এমএ, বিএড। টেট দিয়েছে। তাঁর চাকরি হয়নি। আমার একটি মাত্র মেয়ে ‘গ্রুপ সি’র কর্মী-পদে চাকরির জন্য এসএসসি-র পরীক্ষা দিয়েছিল, তাঁর চাকরি হয়নি।’’ তাপস মণ্ডল এবং গোপাল দলপতিকে তিনি চেনেন না বলেও জানিয়েছেন সুজয়। তিনি ইডি এবং সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। এর আগে কয়লা কাণ্ডে সিবিআই তাঁকে সাক্ষী হিসেবে ডেকেছিল বলে জানিয়েছেন সুজয়। তিনি জানান, ইডি-ও তাঁকে ডেকেছিল। কিন্তু সেই সময় তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি যেতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE