Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Arrest

মোবাইলের সূত্র ধরেই প্রৌঢ়া-খুনের কিনারা, গ্রেফতার ২

গত ৩০ জানুয়ারি দমদমের ময়লাখানা রোড এলাকায় একটি দোতলা বাড়ির একতলার দরজার তালা ভেঙে প্রৌঢ়া গৃহকর্ত্রী তারা শর্মার (৬৮) দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, ওই দিন বাড়ির পরিচারিকা কাজে গিয়ে প্রৌঢ়ার সাড়া না পেয়ে তাঁর মেয়েকে খবর দেন।

An image of Arrest

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৮
Share: Save:

খুনের ঘটনার পর থেকেই মৃতার মোবাইল ফোনটি পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই মোবাইলের খোঁজ করতে গিয়েই দমদমে প্রৌঢ়াকে খুনের কিনারা করলেন তদন্তকারীরা। মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান ও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে খুনের ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায়, সোমবার এক ধোপা ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রাজেশ চৌধুরী (৪৬) এবং শিবু রায় (৫২)। মঙ্গলবার তাদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।

গত ৩০ জানুয়ারি দমদমের ময়লাখানা রোড এলাকায় একটি দোতলা বাড়ির একতলার দরজার তালা ভেঙে প্রৌঢ়া গৃহকর্ত্রী তারা শর্মার (৬৮) দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, ওই দিন বাড়ির পরিচারিকা কাজে গিয়ে প্রৌঢ়ার সাড়া না পেয়ে তাঁর মেয়েকে খবর দেন। তিনি এসে একতলার দরজার তালা ভেঙে দেখেন, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর মা। ওই প্রৌঢ়ার দেহের ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুসারে তাঁর মাথায় ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। তার জেরেই মৃত্যু বলে মনে করছিলেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, ২৯ জানুয়ারি রাতেই ওই খুনের ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, ওই প্রৌঢ়ার মোবাইল ফোনটি ঘটনাস্থল থেকে উধাও। সেটির গতিবিধি খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, একই টাওয়ার লোকেশনে রয়েছে আরও দু’টি মোবাইল। আবার খুনের সময়ে ঘটনাস্থলেও ওই দু’টি মোবাইল ছিল বলে নজরে আসে
তদন্তকারীদের। এর পরেই ওই দু’টি মোবাইল নম্বর সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এবং এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই দুই মোবাইল ব্যবহারকারী রাজেশ ও শিবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করেছে। রাজেশ তদন্তকারীদের জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়া সুদে টাকা ধার দিতেন। তাঁর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ধার করেছিল অভিযুক্তেরা। সে জন্য তাঁকে প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছিল। কিন্তু সেই টাকা শোধ দিতে না পেরে প্রৌঢ়াকে খুনের পরিকল্পনা করে ওই দু’জন। স্বামীর মৃত্যুর পরে ওই প্রৌঢ়া বাড়িতে একাই থাকতেন। তিনি পাওনা টাকার জন্য বেশ কয়েক বার তাগাদাও দিয়েছিলেন রাজেশদের। তার জেরেই রাজেশ খুনের ছক কষে। সহযোগী শিবুকে নিয়ে টাকা দেওয়ার নামে ২৯ জানুয়ারি রাতে প্রৌঢ়ার বাড়িতে হাজির হয় সে। প্রথমে দোতলায় বসে তারা চা খায়। তার পরে প্রৌঢ়ার মুখ চেপে ধরে। এর পরে ধস্তাধস্তি শুরু হতেই একটি কাঠ দিয়ে সজোরে প্রৌঢ়ার মাথায় আঘাত করে অভিযুক্তেরা। তার জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরে ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চম্পট দেয় রাজেশরা। পালানোর সময়ে প্রৌঢ়ার মোবাইল সঙ্গে নিয়ে যায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, পরিচিত মুখ দেখলে তবেই বাড়ির দরজা খুলতেই ওই প্রৌঢ়া। তাই খুনের নেপথ্যে কোনও পরিচিত রয়েছেন বলে অনুমান ছিল পুলিশের।

সেই সূত্র ধরে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। ওই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। সেই সঙ্গে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের দিকে নজর দিতেই অভিযুক্তদের মোবাইলের হদিস মেলে। এর পরে ধৃতদের লাগাতার জেরা করতেই এক সময়ে তারা ভেঙে পড়ে ও খুনের কথা কবুল করে বলেই পুলিশর দাবি। যদিও প্রৌঢ়ার সেই মোবাইলের হদিস এখনও মেলেনি। সেটির খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE