রবিবার রাতে ভিআইপি রোডের দমদম পার্কে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক গাড়িচালকের। প্রতীকী ছবি।
পুজোর জন্য বাড়ির সামনে মণ্ডপ তৈরি হয়েছিল। তাই সেখানে গাড়ি রাখার জায়গা ছিল না মালিকের। অগত্যা, তিনি চালককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে গাড়ি রেখে দেওয়ার জন্য। বিনিময়ে দিন পিছু ভাড়া দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। সেই মতো চালকের কাছেই কয়েক দিন ধরে গাড়ি রাখছিলেন মালিক। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মালিকের অজানতেই বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন চালক। রবিবার রাতে ভিআইপি রোডের দমদম পার্কে দুর্ঘটনায় পড়ে ওই গাড়িটিই। যাতে মৃত্যু হয় চালকের।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটির মালিকের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। রবিবার রাতে ওই গাড়িটি প্রথমে ধাক্কামারে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাইকে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে মারা যান দুই বাইক-আরোহী। এর পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চালক সজোরে ধাক্কা মারেন একটি লরির পিছনে। ধাক্কার অভিঘাতে গাড়িটি কার্যত লরির নীচে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান গাড়িচালক হীরালাল জয়সওয়ারা এবং এক আরোহী পূজা সিংহ। গুরুতর জখম হন কুন্দন ও রাজেশ মল্লিক নামে আরোহী আরও দুই যুবক।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি গাড়িটির হাতবদল হয়েছিল। সেটির বর্তমান মালিক থাকেন হাওড়ার সালকিয়ায়। তাঁর বাড়ির সামনে পুজোর মণ্ডপ তৈরি হওয়ায় তিনি চালক হীরালালকে গাড়িটি রাখতে দিয়েছিলেন। এর জন্য হীরালালকে দিন পিছু ১৫০ টাকা দিতেন তিনি। হীরালাল অবশ্য নিয়মিত ওই ব্যক্তির গাড়ি চালাতেন না। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তির নিজস্ব চালক যখন থাকতেন না,তখন তাঁর গাড়ি চালাতেন হীরালাল। সেই কারণে চেনা লোককে ভরসা করে গাড়ি রাখতে দিয়েছিলেনওই ব্যক্তি। যার সুযোগ নিয়েছিলেন হীরালাল, কুন্দন ও রাজেশ।ওঁরা তিন জনই বন্ধু। গাড়িটি নিয়ে রবিবার সকলে মিলে ফুর্তি করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।’’
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, তিন জনই ছিলেন মত্ত অবস্থায়। রাজেশ ও কুন্দন সাফাইকর্মীর কাজ করেন বলে জেনেছে পুলিশ। এক তদন্তকারীর কথায়,‘‘হীরালালের মৃত্যু হওয়ায় রাজেশ ও কুন্দনের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, চালক-সহ গাড়ির সব যাত্রীই মত্ত অবস্থায় ছিলেন।’’ দুর্ঘটনায় গাড়িটির সামনের অংশ ভেঙে,দুমড়ে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা নিয়ে পুলিশের কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন গাড়ির মালিক। তিনি দাবি করেছেন, সামগ্রিক ঘটনার বিষয়ে তাঁর বিন্দুবিসর্গও জানা ছিল না।
এ দিকে, এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে সোমবার রাত থেকেই ভিআইপি রোডে গাড়ির গতি বাঁধতে তৎপর হয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। ট্র্যাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, নিরাপত্তার কারণে ভিআইপি রোডে আলোর সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে গার্ডরেল বসিয়ে গাড়ির গতি কমানোর কাজ। আধিকারিকেরা জানান, রাস্তার উপরে উজ্জ্বল সাইনেজও বসানো হবে, যাতে পুলিশের নির্দেশ সম্বন্ধে চালকেরা অবগত থাকেন।
উল্লেখ্য, কলকাতার বহু রাস্তায় অতিরিক্ত গতিতে চলতে গিয়ে অনেক সময়ে জরিমানার মুখেপড়েন চালকেরা। রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী না থাকলেও ক্যামেরায় গাড়ির অতিরিক্ত গতি ধরা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ভিআইপি রোডে সেই ব্যবস্থা নেই। উল্টে, অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা সেখানে বিকল অবস্থায় পড়েআছে। এক দশক আগে বাগজোলা খালে বাস দুর্ঘটনার পরে ভিআইপি রোডে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তার পরে ধীরে ধীরে সে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy