মানবিক: পথকুকুর ও বিড়ালদের জন্য তৈরি হচ্ছে খাবার। নিজস্ব চিত্র
বড় উনুনে এক দিকে চাপানো হয়েছে ৪০ কিলোগ্রাম চালের ভাত। অন্য দিকে, কষানো হচ্ছে মুরগির মাংস। রাঁধুনিকে সাহায্য করছেন পাড়ারই কয়েক জন যুবক-যুবতী। সে সব উনুন থেকে নামতেই এগিয়ে গেলেন তাঁরা। বড় হাঁড়িতে পনেরো কেজি মাংস আর ভাত মাখিয়ে সে সব চারটি সাইকেল ভ্যানে চাপিয়ে রওনা হলেন কয়েক জন। তাঁদের সঙ্গে থার্মোকলের থালা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, নতুন বছরের সকালে পিকনিকে মেতেছেন এক ঝাঁক যুবক-যুবতী।
সোনারপুরের কামরাবাদের ভৌমিকপাড়ায় এ দিন ওই যুবক-যুবতীদের পিছু নিতেই দেখা গেল, অন্য ছবি। পাড়ার অলিগলি ঘুরে পথকুকুর ও বিড়ালদের সামনে পেলেই থার্মোকলের থালা পেতে দিচ্ছিলেন ওঁরা। মাংসের সুঘ্রাণে শীতে কাবু কুকুর-বিড়াল তখন গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছিল গরম মাংস-ভাত খেতে। যুবক-যুবতীদের দাবি, এ দিন চেটেপুটে নববর্ষের ভোজ সারল দেড়শো কুকুর-বিড়াল।
কুড়ি জন যুবক-যুবতীদের নিয়ে তৈরি পাড়ার ওই সংগঠনের কেউ কলেজ পড়ুয়া তো কেউ চাকরি করেন। সংগঠনের সদস্য সৌম্য চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা নববর্ষে আনন্দ করি, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে মেতে থাকি। এ সব দিনে ওরা প্রায় অভুক্তই থাকে। সেই জন্য এ রকম একটা আয়োজন করা হয়েছিল।’’
গত বছরই এন আর এস হাসপাতাল চত্বরে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার ঘটনা অসংখ্য মানুষের সঙ্গে তাঁদেরও নাড়িয়ে দিয়েছিল। এর পরেই ওদের নিয়ে ভাবনা শুরু করেন সদস্যেরা। নিজেদের মধ্যে থেকে চাঁদা তুলে তহবিলও গড়েন। শুধু পাড়াতেই নয়, সোনারপুর-গড়িয়ার সর্বত্র পথকুকুরদের চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করেছেন তাঁরা। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে অনেক কুকুরই জখম হয়, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরে মারা যায় ওরা। ওঁদের পরিষেবায় চিকিৎসা পাচ্ছে সেই সব কুকুর। পাশাপাশি, রাস্তার কুকুর-বিড়ালকে মারধর যাঁরা করেন, তাঁদের কাছেও সদস্যদের আবেদন, প্রয়োজনে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিন। ওদের মারবেন না। এ দিন এই সংক্রান্ত আবেদন সংবলিত লিফলেট বিলি করা হয়।
সদস্যেরা মিলে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও করেছেন। সৌম্যবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের অধিকাংশ সদস্য চাকুরিজীবী। কাজের সময় বাঁচিয়ে ওদের জন্য সময় বার করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy