কসবায় আড়াই বছরের শিশু-সহ একই পরিবারের তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মৃত গৃহকর্তার মামা-মামির পরে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হল। লালবাজার সূত্রের খবর, ধৃত ওই ব্যক্তির নাম চঞ্চল মুখোপাধ্যায়। তিনি ব্যাঙ্কের হয়ে বকেয়া ঋণের টাকা আদায়ের কাজে যুক্ত (রিকভারি এজেন্ট)। তিনিই সোমনাথ রায়কে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন। পরে টাকা আদায়ের নামে হুমকি দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ। মৃতদের যে ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়, সেই ঘরের দেওয়ালে লেখা পাঁচ জনের নামের মধ্যে একটি নাম ছিল চঞ্চলের। বৃহস্পতিবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার কসবার হালতুর একটি বাড়ি থেকে সোমনাথ, তাঁর স্ত্রী সুমিত্রার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সোমনাথের বুকের সঙ্গে কাপড় দিয়ে জড়ানো অবস্থায় মেলে তাঁদের আড়াই বছরের একমাত্র ছেলের দেহ। প্রতিবেশীদের সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে দেহ তিনটি উদ্ধার করে। ময়না তদন্তে জানা যায়, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সোমনাথ এবং তাঁর স্ত্রী। তবে, তার আগে নাক-মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁদের ছেলেকে। যে ঘর থেকে মৃতদেহগুলি উদ্ধার হয়, সেটির দেওয়ালে ‘মৃত্যুর জন্য দায়ী’ পাঁচ জনের নাম লেখা ছিল। রাতেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন সুমিত্রার বাবা ও দিদি।
তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযোগপত্রে নাম থাকা সোমনাথের মামা প্রদীপকুমার ঘোষাল এবং মামি নীলিমাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রের দাবি, সোমনাথের দাদুর জমিতে মামা-মামির সঙ্গে তাঁরও অংশীদারি রয়েছে। ছেলের চিকিৎসা-সহ বেশ কিছু কারণে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা ঋণ হয়েছিল সোমনাথের। বাড়ির জমি বিক্রি করে তা মেটানোর ভাবনাচিন্তা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু মামা-মামি বাধা দেন। এমনকি, নিজের বাড়ি না থাকায় সোমনাথদের মরে যাওয়া উচিত বলেও মামা-মামি মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ।
এ দিকে, পুলিশি তদন্তে জানা যায়, চঞ্চল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন সোমনাথকে। বদলে তিনি কিছু কমিশন পান। কিন্তু ঋণের টাকা সোমনাথ আর মেটাতে না পারায় চঞ্চল কয়েক বার তাঁদের বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে আসেন বলেও অভিযোগ। এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘চঞ্চল ১০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন। তিন লক্ষ টাকা কমিশন নিয়েছিলেন। তার পরে ঋণ শোধ করার জন্য শাসানি দিচ্ছিলেন। কার্যত আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল। চঞ্চলকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হয়েছে।’’
যদিও শাসানোর অভিযোগ চঞ্চলের তরফে অস্বীকার করা হয়েছে। বিচারক সওয়াল-জবাব শুনে ১২ মার্চ পর্যন্ত চঞ্চলের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)