দুই ধৃত। শেখ ফরদিন আলি এবং শেখ ইমরান আলি। —নিজস্ব চিত্র
তরুণীকে বাঁচাতে যাওয়া মহিলার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনার পরে পাঁচ মাসও পেরোয়নি। রাতের কলকাতার নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল বুধবার। এ দিনই সামনে এসেছে সোমবার রাতের একটি ঘটনা। এক কিশোরী এবং তার মাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে দুই মোটরবাইক আরোহীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, স্কুটার সারিয়ে দিয়ে সাহায্য করার নামে তারা ওই কিশোরীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শেষে তার ব্যাগ ছিনতাই করে চম্পট দেয়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ দুই তরুণকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে এক জনের বয়স কুড়ি বছর। নাম শেখ ফরদিন আলি। অন্য জন বছর বাইশের, শেখ ইমরান আলি। তিলজলার বাসিন্দা ওই দু’জনকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ মার্চ পর্যন্ত তাদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের মুখে যখন শহরের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা তখন এমন ঘটনা ঘটে কী করে?
পুলিশ সূত্রের খবর, পিকনিক গার্ডেন এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরী দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া। সোমবার রাতে স্কুটারে চেপে টিউশন থেকে মায়ের সঙ্গে ফিরছিল সে। তার মা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাস্তায় স্কুটার খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের দেরি হয়ে যায়। রাত ১০টা নাগাদ তাঁরা যখন ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্স এবং সুইনহো লেনের সংযোগস্থলের কাছাকাছি স্কুটার ঠেলতে ঠেলতে এগোচ্ছেন তখন মোটরবাইকে সওয়ার দুই তরুণ এসে দাঁড়ায়। এক তরুণ বলে, ‘‘কিছু সমস্যা হয়েছে? দেখে দেব?’’ কিশোরী রাজি না হলেও তার মা সাহায্য পাওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে পড়েন। কয়েক বার চেষ্টার পরেও দুই যুবক স্কুটার চালু করতে না পারায় মহিলা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন।
মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি স্কুটার ছেড়ে দিতে বললেও যুবকেরা তা করেনি। তখনই তাঁদের সন্দেহ হয়। এর পরে স্কুটার ছেড়ে দিলেও মোটরবাইকে থাকা দুই যুবক তাঁদের পিছু নেয় বলে অভিযোগ। কিছুটা ফাঁকা একটি জায়গায় আসতেই মোটরবাইকে থাকা এক জন নেমে কিশোরীর হাত ধরে টানতে শুরু করে বলে দাবি মহিলার। কিশোরী মাটিতে পড়ে গেলে খানিকটা রাস্তা তাকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। স্কুটার রেখে তার মা ছুটে গেলে কিশোরীর ব্যাগ নিয়ে তারা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। মহিলা বলেন, ‘‘কাছেই কয়েকটি দোকান তখনও খোলা ছিল। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসার আগেই ওই দু’জন পালিয়ে যায়।’’
মঙ্গলবার গড়িয়াহাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছে কয়েকটি বাড়িতে লাগানো সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ পায়। তাতেই মোটরবাইকের ছবি ধরা পড়ে। কিন্তু নম্বরলপ্লেটের স্পষ্ট ছবি মেলেনি। এর পরে মোটরবাইকের নম্বরের তথ্যপঞ্জী ঘেঁটে পুলিশ তিলজলা এলাকার একটি বাইকের হদিস পায়। সন্দেহ হওয়ায় ওই বাইকটি যে ঠিকানায় নথিভুক্ত করা, সেখানে হানা দেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকেই মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। উদ্ধার হয় কিশোরীর ব্যাগটিও। তা থেকে তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে একটি গাড়ি থেকে এক তরুণীর চিৎকার শুনে তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। তরুণীকে নামিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে নীলাঞ্জনার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয় চালক। পরে পুলিশ ওই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করে। রাজ্য সরকার নীলাঞ্জনার পায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনার নীলাঞ্জনার সঙ্গে লালবাজারে দেখাও করেন। তবে তার পরেও যে রাতের কলকাতার চিত্রটা বদলায়নি, তা সোমবারের ঘটনাতেই ফের স্পষ্ট বলে অনেকের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy