E-Paper

ভূস্বর্গের ‘ভয়ঙ্কর’, পাল্টে গেল ভালবাসায়

পাঁচ সপ্তাহ আগে ফোনে প্রথম কথা বলার সময়ে কোমর ভেঙে হাসপাতালে বিছানা-বন্দি পিয়ালি ও তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে সৃঞ্জিনী। ২৫ মে সন্ধ্যায় শ্রীনগরের কাছে ঘটেছিল দুর্ঘটনা।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৮:২৩
An image of a family

স্নেহচ্ছায়া: লুবনা ও শওকতের সঙ্গে পিয়ালি। কাশ্মীরের বাড়িতে। —ফাইল চিত্র।

ভয়ঙ্কর নয়। ভূস্বর্গে ভালবাসা। বেড়াতে গিয়ে বিপদে পড়ে দেড় মাস কাশ্মীরে কাটিয়ে সার বুঝেছেন সঞ্জু এবং পিয়ালি পাল। আজ, সোমবার বিমানে চণ্ডীগড় হয়ে কলকাতায় ফিরছেন তাঁরা।

পাঁচ সপ্তাহ আগে ফোনে প্রথম কথা বলার সময়ে কোমর ভেঙে হাসপাতালে বিছানা-বন্দি পিয়ালি ও তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে সৃঞ্জিনী। ২৫ মে সন্ধ্যায় শ্রীনগরের কাছে ঘটেছিল দুর্ঘটনা। সঞ্জু, পিয়ালিদের প্রবীণ সঙ্গী প্রদীপকুমার দে ক’দিন বাদে মারাও যান। মাস তিনেকের আগে পিয়ালি, সৃঞ্জিনীদের হাঁটার আশা ছিল না। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে কলকাতায় ফেরাতে এক-এক জনের আড়াই লক্ষ টাকা লাগত। পিয়ালি বলছিলেন, “পাহাড়ে ধস নামলেও তো সরকার এয়ারলিফট করে নিয়ে আসে! আমাদের জন্য কি কারও মাথাব্যথা নেই?”

শনিবার সন্ধ্যায় সেই পিয়ালিই বলছেন, “আমাদের এখন দুটো বাড়ি। একটা সোদপুরে, অন্যটা কাশ্মীরে। শারীরিক কষ্ট পেলেও এই সম্পর্কটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ।”

হাসপাতালে পিয়ালিদের ওয়ার্ডেই ছিলেন জনৈক শওকত আহমেদ শেখের ভাই। পায়ে মার্বেল পড়ে তিনি জখম হয়েছিলেন।শওকতের পরিবারের সঙ্গে পিয়ালিদের তখনই ভাব হয়। মাসখানেক বাড়িতে শুয়ে ওষুধ খাওয়া ও বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে রোগিণীদের হাসপাতাল ছেড়ে দিলে শওকত ও তাঁর স্ত্রী লুবনা গৌহরই দেবদূতের মতো পাশে দাঁড়ান। পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ সঞ্জু বুঝে উঠতে পারছিলেন না, এতগুলো বাড়তি দিন এত দূরে শয্যাশায়ী বৌ, মেয়েকে নিয়ে কী ভাবে থাকবেন! তাঁকে শওকতই বলেন, দু’তিনটে মাস কোনও ব্যাপার নয়! এই বিপদে ওঁর বাড়ির দরজা খোলা!

ছোটখাটো ঠিকাদারির কাজ করেন শওকত। থাকেন বিমানবন্দরের কাছে বাডগামের শেখপুরায়। সঞ্জুর কথায়, “এক বারও মনে হয়নি অচেনা কোথাও আছি। কলকাতায় সহকর্মী, বন্ধুরা কয়েক জন টাকা তুলেছিলেন। তাতে রোজকার ওষুধ, ফল কিনতাম। কিন্তু দাদা এবং ভাবি (শওকত ও তাঁর স্ত্রী) আমার অসুস্থ বৌ, মেয়ের জন্য প্রোটিন জোগাতে আখরোট, বাদাম থেকে চিকেন, মাটনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। পাশের বাড়ির তনভির এখন আমার প্রিয় বন্ধু! ওর বাইকটাই এখানে আমার বাইক। গোটা মহল্লাই অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছে।”

দেড় মাসের ভূস্বর্গ অভিজ্ঞতার স্বাদ পেয়ে সঞ্জু বলছেন, “আমার দেখা কাশ্মীরের সঙ্গে সিনেমার অপপ্রচারের মিল নেই। একপেশে ভাবে অমুককে খারাপ বলে দেগে দেওয়া অন্যায়।” পিয়ালির কথায়, “হাসপাতালে মা, বাবাকে নাগাড়ে দেখতে যেতেই আমরা হাঁপিয়ে উঠি। এখানে দুর্ঘটনার পর থেকে যা সাহায্য পেয়েছি, অভাবনীয়!”

পিয়ালি ও সৃঞ্জিনী এত তাড়াতাড়ি ওয়াকার ঠেলে হাঁটবেন, তা ভাবেননি স্থানীয় ডাক্তারবাবুও। শওকত লাজুক স্বরে বললেন, “যা করেছি, এটাই কাশ্মীরের রীতি। ৯০ ভাগ লোকই এমন।” তাঁর আক্ষেপ, “মেহমানদের কাশ্মীর পুরো ঘোরাটা বাকি থাকল!’’ সঞ্জু, পিয়ালিরা কথা দিয়েছেন, “বন্ধু তনভিরের বিয়েতে পরের বছর আসব। না এলে নিজের কাছেই বেইমান হয়ে থাকতে হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tourist Kashmir Accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy