Advertisement
E-Paper

শনিবার থেকে উধাও, পাটুলির বৃদ্ধকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল বজবজের এটিএএমে

পুলিশ সূত্রে খবর, শুরুতে রুটিন মেনেই বাকি সমস্ত থানাকে নিখোঁজ বৃদ্ধের ছবি পাঠানো হয়। সাব-ইনস্পেক্টর মিহির বিশ্বাস থানার অন্য সহকর্মীদের নিয়ে এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে খোঁজ চালান। পরের দিকে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পাটুলি থানার আধিকারিকরা গিয়ে খোঁজ করেন ওই বৃদ্ধের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:৫৫
ফিরিয়ে আনার পরে পাটুলি থানায় পরিবারের সঙ্গে দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

ফিরিয়ে আনার পরে পাটুলি থানায় পরিবারের সঙ্গে দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে শহরের রাস্তাঘাট, হাসপাতাল থেকে শুরু করে রেলস্টেশন— সর্বত্র খোঁজ করেও হদিশ মেলেনি। শেষে সোমবার সকালে শিয়ালদহ স্টেশনের এক সাফাইকর্মীর দেওয়া সূত্র ধরে বজবজের একটি এটিএম থেকে ৭৯ বছরের এক বৃদ্ধকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরাল পাটুলি থানার পুলিশ।

বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি টাউনশিপের বাসিন্দা দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যালঝাইমার্সের রোগী। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বাইরে বেরোন। তার পর দীর্ঘ ক্ষণ কেটে গেলেও তিনি বাড়ি ফেরেননি। আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর খোঁজ শুরু করেন পরিবারের লোকজন। কোথাও খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পাটুলি থানায় অভিযোগ জানান দেবনারায়ণবাবুর পরিবার।

পুলিশ সূত্রে খবর, শুরুতে রুটিন মেনেই বাকি সমস্ত থানাকে নিখোঁজ বৃদ্ধের ছবি পাঠানো হয়। সাব-ইনস্পেক্টর মিহির বিশ্বাস থানার অন্য সহকর্মীদের নিয়ে এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে খোঁজ চালান। পরের দিকে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পাটুলি থানার আধিকারিকরা গিয়ে খোঁজ করেন ওই বৃদ্ধের। কিন্তু কোথাও কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি তাঁর।

পাটুলি থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘এর মধ্যেই বৃদ্ধের পরিবারের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি যে, সিউড়িতে তাঁদের এক আত্মীয় আছেন। শেষ চেষ্টা হিসাবে আমরা হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনের ঢোকা বেরনোর সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করি। পাশাপাশি শিয়ালদহ (দক্ষিণ) শাখার বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেও তল্লাশি চলে। বৃদ্ধের ছবি দিয়ে সাহায্য চাওয়া হয় রেল পুলিশের।’’ তিনি আরও জানান, শিয়ালদহ স্টেশনের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় বৃদ্ধকে। পাশাপাশি অন্য আর একটি ফুটেজে দেখা যায় শিয়ালদহের ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি ফাঁকা ট্রেনে উঠেছেন ওই বৃদ্ধ।

আরও পড়ুন:ফারুখ আবদুল্লা কোথায়? শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই উত্তাল সংসদ
আরও পড়ুন:আচমকা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নুসরত জাহান, একসঙ্গে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে বিপত্তি?

রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর পর পুলিশ জানতে পারে, ওই ট্রেনটি শিয়ালদহ রেল সাইডিংয়ে গিয়েছিল। সাইডিংয়ে খোঁজ করে ওই বৃদ্ধের কোনও হদিশ পাওয়া যায় না। তাতে তদন্তকরীরা মনে করেন, সম্ভবত বৃদ্ধ ওই ট্রেনেই রাতে থেকে গিয়েছিলেন এবং সকালে ফের যখন ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসে, তখন সেই ট্রেনে চেপেই তিনি শিয়ালদহ স্টেশনে ফিরে আসেন। সেই সূত্র ধরে ওই নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের বাসিন্দাদের বৃদ্ধের ছবি দেখিয়ে পুলিশ খোঁজ করা শুরু করে। আর সেখান থেকেই জানা যায় প্ল্যাটফর্মের এক সাফাইকর্মী ওই বৃদ্ধকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। তার পর বৃদ্ধ একটি ট্রেনে উঠে পড়েন। জানা যায় ওই ট্রেনটি ছিল বজবজ লোকাল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পর পুলিশ বজবজে যাওয়ার পথে সমস্ত স্টেশনে খোঁজ করে। বজবজ থানাকেও জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত সোমবার সকালে বজবজেরই একটি এটিএমের মধ্যে বৃদ্ধকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পান পুলিশ কর্মীরা। খবর পেয়ে পাটুলি থানার আধিকারিকরা সেখান থেকে নিয়ে এসে বৃদ্ধকে সোমবার দুপুরে তুলে দেন তাঁর পরিবারের হাতে।

এক জন অ্যালঝাইমার্সের রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটা যে খুবই স্বাভাবিক, সে কথা বলছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সমর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মস্তিষ্কের কোষে থাকে অ্যাসিটাইলকোলিন নামে একটি নিউরো কেমিক্যাল ট্র্যান্সমিটার। এটি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। সেটাই আমাদের স্মৃতিভ্রংশের মূল কারণ। এর ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং মনোসংযোগের ক্ষমতাও কমে আসে। এই ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তাকে বলে অ্যালঝাইমার্স ডিমেনশিয়া। দেবনারায়ণবাবুর মতো বৃদ্ধ অ্যালঝাইমার্স রোগীদের এমন ঘটাটা খুবই স্বাভাবিক।’’

Alzheimer Kolkata Police ATM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy