Advertisement
E-Paper

Agnipath Scheme: সব ক্ষেত্রেই রেলকে সহজ নিশানা করা কবে বন্ধ হবে

এ দিন সকালে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! রাকেশের ফোনে মেসেজ এল, আমাদের শনিবারের ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

পুষ্পা কুসওয়াত

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ০৬:১১
স্বস্তি: হাওড়া থেকে শিয়ালদহের পথে পুষ্পা, রাকেশ ও তাঁদের মেয়ে। শনিবার।

স্বস্তি: হাওড়া থেকে শিয়ালদহের পথে পুষ্পা, রাকেশ ও তাঁদের মেয়ে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।

অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না! হাওড়ায় আসার ট্রেনে মাঝপথে আটকে থেকেছি প্রায় আট ঘণ্টা। হাওড়ায় পৌঁছেও স্টেশনে পড়ে থাকতে হয়েছে প্রায় গোটা একটা দিন! মেয়েটা অধৈর্য হয়ে উঠেছে। আমাদেরও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। সব কিছুর জ্বালা কেন ট্রেনের উপরে মেটানো হয়, জানি না। দেশ জুড়ে রেল অবরোধ করে, ট্রেন জ্বালিয়ে, স্টেশনে ভাঙচুর করে যা চলছে, তাতে কবে বাড়ি পৌঁছতে পারব, বুঝতে পারছি না।

আমাদের বাড়ি লখনউয়ে। স্বামী রাকেশের কাজের সূত্রে গত কয়েক বছর ধরে আমরা বিশাখাপত্তনমে রয়েছি। সেখানে ও একটি ইস্পাত কারখানায় চাকরি করে। আমাদের মেয়ের চার বছর বয়স। বছরে এক বার ছুটি নিয়ে আমরা লখনউয়ের বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে যাই। কয়েক দিন সেখানে থেকে আবার বিশাখাপত্তনমে ফিরে যাই। ট্রেনে হাওড়া হয়েই যাই আমরা। এ বার যখন লখনউ যাওয়ার টিকিট করি, তখন এই ধরনের কোনও সমস্যা ছিল না। হঠাৎ করে যে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, ভাবতেও পারিনি।

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে হাওড়ার ট্রেনে উঠি আমরা। সে দিনই সন্ধ্যা সাতটায় সেই ট্রেনের হাওড়ায় পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু মাঝপথে ট্রেন আটকে যায়। বিক্ষোভের কারণে সিগন্যাল ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে উঠেছিলাম। লখনউয়ে পৌঁছতেই হবে ভেবে তবু ধৈর্য ধরে রাখার চেষ্টা করছিলাম। সন্ধ্যা সাতটার বদলে সেই ট্রেন হাওড়ায় ঢোকে রাত তিনটে নাগাদ। এখানে নেমে তবু কিছুটা স্বস্তি পাই। পরের দিন, অর্থাৎ, গত শুক্রবার হাওড়া থেকে সকাল আটটার ট্রেন ছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে জানতে পারলাম, ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এর পরে তখনকার মতো স্টেশনই হয়ে উঠল আমাদের ঘর-বাড়ি।

মেয়েকে আমার কাছে বসিয়ে রেখে রাকেশ গেল ট্রেনের খোঁজ করতে। এ দিকে, সঙ্গে আনা খাবার শেষ হয়ে গিয়েছে। জল আর কিছু শুকনো খাবার কিনে খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। মেয়েটার জন্য আনা দুধের জোগানও শেষ। এর মধ্যে কান্নাকাটি শুরু করল সে। কিছুতেই থামানো যায় না। একটা বাচ্চাকে কত ক্ষণ আর ভুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়! স্টেশন চত্বরটা যেন গিলে খেতে আসছিল। রাকেশ ফিরে এসে জানাল, কোনও আশা নেই। আরও বেশ কিছু ট্রেন বাতিল হওয়ার কথা রয়েছে। তবু শনিবারের টিকিট তৎকালে পেয়েছে বলল। সামান্য স্বস্তি পেলাম যেন। কষ্ট করে রাতটা কাটিয়ে দেব ভেবে স্টেশনেই থেকে গেলাম।

এ দিন সকালে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! রাকেশের ফোনে মেসেজ এল, আমাদের শনিবারের ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রাকেশ ফের গেল স্টেশনে কথা বলে দেখতে। এর মধ্যেই দফায় দফায় বাড়ির লোকজন ফোন করছেন। সকলেই আতঙ্কিত। কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন, এর মধ্যে লখনউ যাওয়ার দরকার নেই। বিশাখাপত্তনমে ফিরে যাওয়াই ভাল। সঙ্গে আনা টাকাও প্রায় শেষ। দুপুরে কিছু খাবার কিনে আর টাকা তুলে নিয়ে এসে রাকেশ জানাল, একমাত্র ভরসা রাজধানী এক্সপ্রেস। সেটা চলছে। তবে রাজধানী সরাসরি লখনউ যাবে না। কাছাকাছি কোনও স্টেশ‌নে নেমে অন্য ট্রেন ধরতে হবে। তৎকালে টিকিট কাটার জন্য পরিচিত ট্র্যাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করল রাকেশ। মোট সাত হাজার টাকা দিয়ে টিকিট করা হল আমাদের। যা দাম, তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ টাকা বেরিয়ে গেল।

তবে এটা ভেবে স্বস্তি লাগছে যে, তবুও তো বাড়ি ফেরার একটা রাস্তা তৈরি হল! হাওড়া স্টেশন থেকে ট্যাক্সিতে শিয়ালদহ পৌঁছে রাজধানী ধরেছি আমরা। এখন ভালয় ভালয় লখনউ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে হয়! রাস্তায় বসে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বার বার মনে হচ্ছে, আমরা না হয় এত টাকা দিয়ে টিকিট কেটে নিতে পারলাম। যাঁরা পারছেন না, তাঁদের কী হবে? সব ক্ষেত্রেই রেলকে সহজ নিশানা করা কবে বন্ধ হবে?

- ভুক্তভোগী ট্রেনযাত্রী

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Agnipath Scheme train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy