Advertisement
E-Paper

ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা, রণক্ষেত্র ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী স্কুল, গ্রেফতার শিক্ষক

নার্সারির এক ছাত্রীর যৌন হেনস্তার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রর চেহারা নিল দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুল চত্বর। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে অভিভাবকদের সংঘর্ষ হয়।

অভিভাবকদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন এই মহিলা।

অভিভাবকদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন এই মহিলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ১১:০৯
Share
Save

ফের স্কুলের ভিতরেই পড়ুয়াকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলএক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নার্সারির এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুল চত্বর। পরিস্থিতি সামলাতে হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক দীপক কর্মকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ দিন সকালে ওই স্কুলের সামনে কয়েকশো অভিভাবক এসে জড়ো হন। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষক দীপক কর্মকার নার্সারি বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করেছেন। ৬ বছরের ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিজেপির ডাকা বন্‌ধের দিন ওই ঘটনা ঘটে। তার মায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই দিন স্কুল খোলা ছিল। আমি মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু, বাড়ি ফেরার পর থেকেই মেয়ে কেমন একটা অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। আমরা প্রথমে কিছু বুঝতেই পারিনি। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, খুব ভয় পেয়েছে। অন্য দিনের মতো কথাও বলছিল না।’’ বাবা-মায়ের অভিযোগ, এর পরেই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা এর পর আরও বেড়ে যায়। বার বার জিজ্ঞাসা করার পর তারা গোটা ঘটনার কথা জানতে পারেন। ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, “বন্‌ধের দিন স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরার সংখ্যা অনেক কম ছিল। দীপক কর্মকার ওদের বাংলা ও ইংরেজি পড়ান। তিনি আমারমেয়েকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে যান। সেখানেই ওর উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন ওই শিক্ষক।’’ তাঁদের দাবি, ঘটনার কথা জানার পরেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যানমেয়েকে। চিকিৎসকও যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছেন বলেওই ছাত্রীর বাবা দাবি করে জানান, মেডিক্যাল রিপোর্টে সে প্রসঙ্গে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

আরও পড়ুন: মহাবিপদ! সর্বনাশের থেকে মাত্র ১২ বছর দূরে দাঁড়িয়ে পৃথিবী

অন্য অভিভাবকদের মধ্যে এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়া মাত্রই তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এ দিন সকালে স্কুল চত্বরে পৌঁছে তাঁরা মেন গেট অবরোধ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। মেন গেট বন্ধ হয়ে পড়ায় স্কুল ছুটির পরে ভিতরে আটকে পড়ে প্রচুর পড়ুয়া। আটকে পড়েন শিক্ষকরাও। গেটের বাইরে তত ক্ষণে বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের ক্ষোভের পারদ চড়তে শুরু করেছে। তাঁরা জোর করে গেট খুলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। ভয় পেয়ে বেশ কয়েক জন খুদে পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা তখন ওই সব খুদে পড়ুয়াদের বাইরে বেরোতে দেন। পরিস্থিতি বুঝে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেন।

দেখুন ভিডিয়ো:

লেক থানার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। উত্তেজিত অভিভাবকদের সঙ্গে তারা প্রথমে আলোচনার চেষ্টা করে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তার মধ্যেই অভিভাবকদের একাংশ জোর করে স্কুলের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ তখন তাঁদের ঢুকতে বাধা দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে লেক থানা অতিরিক্ত বাহিনী পাঠায় ঘটনাস্থলে। উত্তেজিত অভিভাবকদের সঙ্গে এর পরেই পুলিশের বচসা বাধে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা হাতাহাতি-ধস্তাধস্তিতে গড়ায়। পুলিশের অভিযোগ, অভিভাবকদের একাংশ তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। অভিযুক্ত শিক্ষকের মোটরবাইক ভাঙচুর করেন তাঁরা। স্কুলের ভিতরে ঢুকেও অভিভাবকদের একাংশ ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। উত্তেজিত অভিভাবকদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদেরমৃদু লাঠিচার্জও করতে হয় বলে দাবি। অভিভাকদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশ শুরু থেকেই তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছিল। তা থেকেই বচসা শুরু হয়। তাঁদের দাবি, পুলিশ অকারণে এলোপাথাড়ি ভাবে লাঠিচার্জ করে। মহিলাদেরও রেহাই দেয়নি। অভিভাবকদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে মাথা ফেটেছে এক মহিলার। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, লাঠিচার্জের পর অভিভাবকরা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হলেও পরিস্থিতি এ দিন দুপুর পর্যন্ত যথেষ্ট উত্তপ্ত রয়েছে।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় পুলিশ।

এর পরেই নাকতলার বাসিন্দা অভিযুক্ত শিক্ষক দীপক কর্মকারকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসিডি) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরেই গ্রেফতার করেছি অভিযুক্ত শিক্ষককে। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের গাইডলাইন মেনে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করব। অভিভাবকদের একটা অংশ আই নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তা প্রতিরোধ করেছে।’’ এ বিষয়ে এ দিন দুপুর পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষক বা স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ দিন দুপুরে ওই স্কুলে গিয়েছিলেন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়।

রক্তে ভেসে যাচ্ছেন এক অভিভাবক। অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়েই এই দশা।

আরও পড়ুন: ভিলাইয়ের স্টিল প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, গ্যাস পাইপ ফেটে মৃত অন্তত ৬

এর আগেও শহরের একাধিক স্কুলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাসবিহারীর কাছে কারমেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুলেরই নৃত্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিল। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে চার বছরের এক শিশু শারীরশিক্ষার শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলে। ওই দুই ঘটনাতেও প্রতিবাদে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য।

—নিজস্ব চিত্র।

Dhakuria Binodini girls school Molestation Child Sexual Harassment ঢাকুরিয়া

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}