Advertisement
E-Paper

বিরোধিতায় রোজা এ শহরের শাহিনবাগের

এ দিনের আন্দোলনে ঘুরেফিরে উঠছিল ঐশীদের বিরুদ্ধেই প্রশাসনের অভিযোগের প্রসঙ্গটি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৮
মুখ: পার্ক সার্কাসের জমায়েতে শামিল বৃদ্ধারাও। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মুখ: পার্ক সার্কাসের জমায়েতে শামিল বৃদ্ধারাও। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

দিনভর রোজা রেখে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ডাকা আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে শামিল হলেন স্থানীয় শ’দুয়েক প্রবীণ মহিলা। মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাতভর পার্ক সার্কাস ময়দানে কাটিয়ে বুধবার সুর্যোদয়ের আগে সেহরি খেয়ে উপবাস শুরু করেন তাঁরা। আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে মেহেন্দিবাগানের ষাটোর্ধ্ব নীলুফা ইয়াসমিন, রিপন স্ট্রিটের আয়েশা বিবি, বেনিয়াপুকুরের আসমা বিবি বা কড়েয়া রোডের হামিদা বানুরা এ ভাবেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। এ দিনের ধর্মঘট উপেক্ষা করে পার্ক সার্কাস ময়দানের জমায়েত মনে করিয়ে দিচ্ছিল দিল্লির শাহিনবাগকে।

পাশাপাশি, নজর কেড়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভিড়। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়-সহ শহরের নানা প্রান্তের কলেজ থেকে ছাত্রীরা সেখানে যোগ দেন। প্রেসিডেন্সির রিমঝিম সিংহ, বৃষ্টি সেন বন্দ্যোপাধ্যায় বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দীপান্বিতা পালরা সেখানে বসেই দিনভর নানা স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন। ওঁদের কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, কারও হাতে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বা মির্জা গালিবের উদ্ধৃতি লেখা পোস্টার। তবে বৃদ্ধাদের হাতে ধরা আরও একটি পোস্টার সেই ভিড়ে নজর টানছিল। তাতে জেএনইউ-এর ছাত্রনেত্রী ঐশী ঘোষের রক্তাক্ত ছবির নীচে লেখা, ‘সেভ জেএনইউ, সেভ এডুকেশন, ব্যান আরএসএস-এবিভিপি’।

এ দিনের আন্দোলনে ঘুরেফিরে উঠছিল ঐশীদের বিরুদ্ধেই প্রশাসনের অভিযোগের প্রসঙ্গটি। এ দিনের শিরোনামে থাকা সেই খবর প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্ষুব্ধ আয়েশা জামাল বলছিলেন, ‘‘ধর্মঘট থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আন্দোলনে যোগ দিতেই ছুটি নিয়েছি। ঐশীরা আক্রমণের শিকার হলেন, অথচ পুলিশ ওঁদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করল! এ থেকেই স্পষ্ট, রাষ্ট্রের মনোভাব। এ থেকে মুক্তি পেতে সব মানুষকে পথে নামতে হবে।’’

সেই পথে নামার ডাকেই স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে সাড়া দিয়েছেন নীলুফা। তাঁর কথায়, ‘‘ঘর-সংসার সামলাই। কোনও দিন রাতভর আন্দোলন করিনি। কিন্তু দেশের এমন পরিস্থিতিতে ঘরে চুপ করে বসে থাকা যায়! তাই সবার পাশে দাঁড়ালাম।’’ আয়েশার ক্ষোভ, ‘‘পাঁচ পুরুষ ধরে এ দেশে থাকছি। মোদী সরকার এখন আমাদের নাগরিকত্বের তথ্য চাইছে! তবে কি এত দিন আমরা ভারতীয় ছিলাম না?’’ পার্ক সার্কাস এলাকার স্থানীয়েরাই এই আন্দোলনের আয়োজক। তাঁদের তরফে উর্দু কবি আকিল আহমেদ আকিলের কথায়, ‘‘প্রথম দিনেই প্রায় দুশো মহিলা সারারাত ছিলেন। আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে ওঁরা প্রত্যেকে রোজা রেখেছেন। প্রতিদিন তাঁরা রাখবেনও।’’

এ দিন মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে পার্ক সার্কাস ময়দানে উপস্থিত ছিলেন নাখোদা মসজিদের ইমাম সফিক কুরেশি। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণত রমজান মাসে রোজা রাখেন মুসলিমরা। তবে ইচ্ছাপূরণে বছরের অন্য সময়েও কেউ রোজা রাখতেই পারেন।’’ ইচ্ছেপূরণের এই শক্তি ওঁদের যুগিয়েছে শাহিনবাগ, এ দাবি তাঁদেরই।

আসমত জমিনের কথায়, ‘‘শাহিনবাগ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। ওঁদের প্রাণশক্তি দেখেই এই জমায়েতের সিদ্ধান্ত।’’ ভাল কাজের জন্য প্রতিযোগিতা হলে তাতে সেই কাজ আরও পোক্ত হয় বলে মনে করেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের সদস্যা উজমা আলম। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লির শাহিনবাগ দেখিয়ে দিয়েছে, বাচ্চা কোলে সাধারণ মহিলাদের আন্দোলন কতটা তীব্র হতে পারে। নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আমাদের এই আন্দোলনকেও সেই মাত্রা দিতে চাই। সৎ কর্মের প্রতিযোগিতা তো শুভ উদ্যোগ।’’

CAA Park Circus Shaheen Bagh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy