অন্য বছরের মতো এ বারও পুজোর দিনগুলিতে লোকাল ট্রেন, মেট্রো রেল এবং সরকারি-বেসরকারি বাস হাত ধরাধরি করে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের চাপ সামলাবে বলে ভেবেছিলেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই। মেট্রো নতুন পথে সম্প্রসারিত হওয়ার পরে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ ছাড়াও পূর্ব এবং পশ্চিমে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীর ঢল নামবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে চলতি বছরের পুজোয় সম্প্রসারিত পথে মেট্রো চালু হওয়ার পরে লোকাল ট্রেন ও মেট্রোর সম্মিলিত প্রভাবের কাছে সরকারি এবং বেসরকারি বাসের পরিষেবার কোণঠাসা হওয়ার ছবিটাই ধরা পড়েছে।
রাতের দিকে কলকাতায় বহু রুটে বেসরকারি বাসের সংখ্যা এ বার অন্য বারের তুলনায় বেশ কম বলে জানাচ্ছেন বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্ব। সরকারি বাসের সংখ্যা নির্দিষ্ট কিছু রুটে রাতের দিকে বাড়ানো হলেও সেখানে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মুখে যাত্রী মিলছে বেশি। তেল কেনার টাকা নিয়ে টানাটানির সমস্যায় শহরের অনেক রুটে সরকারি বাসের পরিষেবা কাটছাঁট করতে হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
রাতে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে অন্য বছরগুলিতে যে ভাবে সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, ডানকুনি, বালি, দক্ষিণেশ্বর, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বারাসত, উল্টোডাঙা, নিউ টাউন, কসবা, আলিপুর, বেহালা, ঠাকুরপুকুর রুটে বাসের দেখা মিলত, এ বার তার অর্ধেকেরও কম বাস দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন পথে বেরোনো ভুক্তভোগী যাত্রীরা। সময়মতো বাস না পেয়ে অনেককেই বেশি ভাড়া খরচ করে ক্যাব অথবা অটো ধরতে হয়েছে বলে অভিযোগ।
বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘তিনটি মেট্রোপথের সংযুক্তির পরেও উত্তর এবং পূর্ব কলকাতার বহু বাস রুটের মাত্র দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার অংশে যাত্রী মিলছে। সেখানেও অটো বা অন্য কোনও যানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। যাত্রী না মেলায় অনেক বাস রাস্তায় নামেইনি।’’ এর পাশাপাশি, পুজোর আগে বাস তুলে নেওয়া নিয়ে পুলিশি ধরপাকড়ের কারণে পর পর তিন দিন বাস না চলার সমস্যাকেও দায়ী করেছেন প্রদীপ।
‘অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রুটে নিয়মিত বাস পাওয়াটা যাত্রীদের কাছে অভ্যাসের মতো। পুজোর আগে পুলিশ না জানিয়ে বাস নিয়ে ধরপাকড় শুরু করায় পরিষেবার ছন্দ নষ্ট হয়েছে। বহু চালু রুটে যাত্রী কম বেরোনোর কারণে বাসের ট্রিপের সংখ্যা কমেছে। পরিষেবা ধাক্কা খেয়েছে।’’
বাসমালিকদের আর একটি সংগঠন ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘পুজোর ষষ্ঠী থেকে নবমীর মধ্যে ভাড়া থেকে সাধারণত যে অঙ্কের রোজগার হয়, এ বার হয়েছে তার ৫০ শতাংশ। মেট্রোর কারণে বহু রুটে যাত্রীদের যাতায়াতের ধরন বদলে গিয়েছে।’’
বেশি রাতের দিকে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মুখে অথবা ভোরে সরকারি বাস তুলনায় বেশি যাত্রী পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার পরেও চাহিদা অনুযায়ী বহু রুটে সরকারি বাস নামানো যায়নি। তৃতীয়া থেকে পঞ্চমীর মধ্যে শহরের রাস্তায় বাস নিয়ে জটিলতার কারণেযাত্রীদের বড় অংশ মেট্রোকেন্দ্রিক থেকেছেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে।
অন্য দিকে, চতুর্থী থেকে পঞ্চমীর মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় যাত্রী বাড়লেও পরের দিকে সেখানে যাত্রী কমেছে বলে খবর। পূর্ব প্রান্তে শিয়ালদহ, ফুলবাগান কিংবা সল্টলেক যাওয়ার আগ্রহ কম দেখা গিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গিয়েছে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয়।
ওই মেট্রোপথকে ঘিরে প্রতিমা দর্শনের ভিড় আছড়ে পড়েছে। যাত্রী সংখ্যা ছয় থেকে সাড়ে সাত লক্ষের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। যাত্রীদের বড় অংশ যাতায়াত করেছেন উত্তরে শোভাবাজার থেকে দক্ষিণে কালীঘাটের মধ্যে। এর বাইরে উত্তরে দক্ষিণেশ্বর, দমদম, বেলেঘাটা, শ্যামবাজার এবং দক্ষিণে টালিগঞ্জ ও গড়িয়া ভিড়ের খানিকটা ভাগ পেয়েছে।
লোকাল ট্রেনে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনেও গত কয়েক দিনের ভিড় গড়ে ছ’-সাত লক্ষের আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে বলে জানা যাচ্ছে। তুলনায় কম হলেও যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়েছে হাওড়া ডিভিশনে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)