Advertisement
E-Paper

ডিম বনাম মুরগি, পোড়া ঝুপড়িতে ত্রাণের লড়াই

ডিম আগে না মুরগি! চিরন্তন এই ধাঁধা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ফুলবাগানের ঝুপড়িতেও! সৌজন্যে ত্রাণের রাজনীতি। ফুলবাগানের পুড়ে যাওয়া ঝুপড়ির বাসিন্দাদের খাওয়ানো নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছিল রাজনীতি। বিজেপি শিবিরে ছিল খিচুড়ি-লাবড়া। তৃণমূলের ডাল-ভাত-তরকারি। বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের মেনুতে এসে পড়ে ডিম। শুক্রবার সকালে বিজেপি শিবিরে ডিম ঢুকতেই তৃণমূল এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে এসেছে মুরগির মাংস!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০২

ডিম আগে না মুরগি! চিরন্তন এই ধাঁধা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ফুলবাগানের ঝুপড়িতেও! সৌজন্যে ত্রাণের রাজনীতি।

ফুলবাগানের পুড়ে যাওয়া ঝুপড়ির বাসিন্দাদের খাওয়ানো নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছিল রাজনীতি। বিজেপি শিবিরে ছিল খিচুড়ি-লাবড়া। তৃণমূলের ডাল-ভাত-তরকারি। বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের মেনুতে এসে পড়ে ডিম। শুক্রবার সকালে বিজেপি শিবিরে ডিম ঢুকতেই তৃণমূল এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে এসেছে মুরগির মাংস! প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি এ বার মুরগি রাঁধলে কি শাসক শিবিরে মটন ঢুকবে?

এ দিন ভরদুপুরে বিজেপি-র ডিম-ভাতের শিবিরে লাইন দিয়েছিলেন অনেকেই। তা দেখেই তৃণমূলকর্মীরা হাঁকডাক শুরু করে দেন, “এ দিকে আসুন। পেট ভরে মাংস-ভাত খেয়ে যান।” খিদের মুখে এমন ডাক শুনে কেউ কেউ শিবির বদলেছেন। অনেকেই আবার ডিম-ভাতে পেট ভরিয়ে ফেলায় মুরগির স্বাদ থেকে বঞ্চিত থেকেছেন।

ফুলবাগানের ঝুপড়িতে এই কাণ্ডকারখানার সঙ্গে অনেকেই হরিদ্বারের হর-কি-পৌরি ঘাটের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। দরিদ্রদের খাওয়াতে নিত্যদিনই সেখানে ভাণ্ডারার আয়োজন করেন ধনী মানুষেরা। কিন্তু ভাণ্ডারার শিবির এতই বেশি যে, অনেক সময়ে থালাভর্তি খাবার নিয়েও লোক মেলে না! যাঁরা ভাণ্ডারায় খেতে আসেন, তাঁরাও আয়োজন বুঝেই পাত পাড়েন। মনপসন্দ খাবার না হলে ভাণ্ডারার পথ মাড়ানোই তাঁদের ধাতে নেই!

পুড়ে যাওয়া ঝুপড়ির বাসিন্দারা এতটা মেজাজি নন। তবে খিদের পেটে ভালমন্দ খাবার পেলে যে তাঁরা রং বিচার করবেন না, তা-ও জানিয়েছেন অনেকেই। দুপুরে ডিম-ভাত খেয়ে পেট ভরানো কয়েক জনকে বিকেলে তৃণমূল শিবিরে দেখা গেল, রাতে মাংস মিলবে কি না, তা জানতে চাইছেন। অনেকেই আবার রাজনীতির এই কাড়াকাড়িতে বিরক্ত। বাসিন্দাদের কয়েক জনকে এ দিন চাপা স্বরে বলতে শোনা গিয়েছে, “বাড়ি আস্ত থাকার সময়ে কেউ ফিরেও তাকাত না। এখন ভোটের দায়ে খাওয়ার জন্য পায়ে ধরতে বাকি রেখেছে!”

তবে ফুলবাগানের শিবিরের দায়িত্বে থাকা নেতা-কর্মীরা রাজনীতির তত্ত্ব মানতে নারাজ। বিজেপি নেতা অশোক সরকারের বক্তব্য, “গরিব মানুষের পাশে থাকতেই এই শিবির। রাজনীতিতে আমরা নেই।” একই সুর ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের হয়ে ত্রাণশিবিরের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় তৃণমূল নেতা অর্ণব দাসের। তিনি বলছেন, “মাংস বা ডিমটা বড় কথা নয়। আসলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকাটাই লক্ষ্য।” তাঁর কটাক্ষ, “অনেকে (পড়ুন বিজেপি) তো মাইক ফুঁকে শিবিরে লোক টানছেন।”

রাজনৈতিক দলগুলি যা-ই বলুক না কেন, ত্রাণশিবিরের রাজনীতি কিন্তু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নেতাদের আনাগোনায়। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। ছিল সিপিএম-বিজেপিও। এ দিন দুপুরে ফের যান সাধনবাবু। সঙ্গে স্ত্রী সুপ্তিদেবী। এলাকার মহিলা তৃণমূলের কর্মী বেবি দাসের বক্তব্য, “আমরা বৃহস্পতিবার পাড়া থেকেই শাড়ি, কাপড় তুলে দিয়েছিলাম। আজ বৌদি (সুপ্তিদেবী) এসেও দিয়েছেন। মহিলাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।”

তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টায় কসুর করছে না বিজেপি-ও। দুপুর ১টা নাগাদ শিবিরে পৌঁছে যান রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সঙ্গে জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ অন্য নেতারা। শিবিরের কাজকর্ম, খাওয়াদাওয়ার তদারকি করেন তাঁরা। তৃণমূল যেমন পলিথিনের চাদর, শাড়ি, কম্বল বিলি করছে, তেমনই পোড়া ঝুপড়িতে ফের বাড়ি তৈরির জন্য তদারকি শুরু করেছেন বিজেপি কর্মীরা। পোড়া জঞ্জাল সরিয়ে ফের বাড়ি তৈরির জন্য বাসিন্দাদের গণ-আবেদনপত্র নিয়ে এ দিন পুরসভার বরো অফিসে যান তাঁরা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই লড়াইয়ে সিপিএম কোথায়? কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী ও সিপিএম নেত্রী রূপা বাগচী বলছেন, “এই ত্রাণের রাজনীতিতে আমরা নেই। বরং কী ভাবে আসল ত্রাণ মিলতে পারে, তার ব্যবস্থা করছি।” তিনি জানান, দিন কয়েক পরেই রাজনৈতিক দলগুলি ত্রাণশিবির বন্ধ করে দেয়। পুরসভা যাতে ত্রাণের ব্যবস্থা করে, তার জন্য চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি, সিপিএমের বস্তি ফেডারেশনের পক্ষ থেকেও ত্রাণ জোগাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শিবির তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে, এমনটা মানতে নারাজ সাধনবাবু। তিনি বলছেন, “যত দিন না ঝুপড়িবাসীরা আর্থিক ভাবে কিছুটা সবল হচ্ছেন, তত দিন শিবির চলবে।” বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের চেষ্টাও হবে বলে তিনি জানান। ত্রাণ-রাজনীতিতে এমন কথা বহু বার শোনা গিয়েছে। এ বার কি আশ্বাস সত্যি হবে? সে দিকেই চেয়ে রয়েছেন ঘরপোড়া মানুষেরা।

ছবি: শৌভিক দে।

relif tmc bjp em bypass fulbagan fulbagan shack BJP and TMC clash chicken rice kolkata news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy