যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল অনুষ্ঠান। সেই সময় ছাত্র ইউনিয়ন রুম সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার হল এক ছাত্রীর দেহ। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চার নম্বর গেটের কাছে গৌর দাস বাউল ও তাঁর দলকে নিয়ে ‘ড্রামা ক্লাব’ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। উপস্থিত ছিলেন পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা। অনুষ্ঠান চলাকালীন রাত ১০ টা ২০ নাগাদ কারও নজরে পড়ে কলা বিভাগের ছাত্র ইউনিয়ন রুম সংলগ্ন পুকুরে কেউ ভাসছেন। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিষয়ের স্নাতক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। ওই ছাত্রীর নাম অনামিকা মণ্ডল।
পুকুর থেকে উদ্ধারের পরে পড়ুয়ারা বেশ কিছুক্ষণ সিপিআর ও জল বার করার চেষ্টা করেন। তার পরে নিয়ে যাওয়া হয় কেপিসি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা ছাত্রীর দেহ পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
কী কারণে পুকুরে পড়ে গিয়েছিলেন ওই ছাত্রী তা এখনও জানা যায়নি। যেহেতু অনুষ্ঠান চলাকালীন মাইক ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং উপস্থিত পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা নাচ-গান করছিলেন, তাই ওই ছাত্রী চিৎকার করলেও সহজে তা কারও কানে পৌঁছোনো সম্ভব নয় বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের।
আরও পড়ুন:
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে কেন রাত অবধি অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ ? আবারও তোলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সিসিটিভি ও পুলিশ আউটপোস্টের দাবি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আরও অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই চলে মদ্যপান। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঘটনাটি ঘটেছে ৪ নম্বর গেটের কাছে এসএফআই ইউনিউন রুমের পাশে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দু’বছর আগে স্বপ্নদীপের মৃত্যু দেখেছি, আজ আবার একজন। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানো ও স্থায়ী পুলিশ পোস্টিং আমাদের বরাবরের দাবি। এইগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। যারা সিসিটিভি লাগানো ও পুলিশ পোস্টিং-এর বিরুদ্ধে, তারা এর দায়ভার এড়াতে পারে না। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা মনোনীত স্থায়ী উপাচার্য চাই।’’ সহ সভাপতি সুদীপ রাহা তদন্তের দাবি জানিয়ে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভির প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা আবার প্রমাণ হয়ে গেল।’’
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা যাদবপুরের প্রাক্তনী সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ঘটনায় প্রাক্তনী হিসেবে আমি স্তম্ভিত। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কচকচানির মতো মানসিকতা তৃণমূলের পক্ষেই দেখানো সম্ভব।’’ তৃণমূলের তোলা প্রশ্নের জবাবে সৃজন বলেন, ‘‘আরজি করে তো সিসিটিভি ছিল। তা হলে তিলোত্তমাকে কেন মরতে হল? দক্ষিণ কলকাতার আইনের কলেজে তো বামপন্থীরা নেই, সেখানে ওই ঘটনা ঘটল কেন?’’