১৯৯৩ সালের বৌবাজার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত মহম্মদ খালিদের মুক্তির নির্দেশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বাতিল করে কলকাতা পুলিশের পক্ষেই সোমবার রায় দিয়েছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।
৩২ বছর ধরে জেলে রয়েছেন অভিযুক্ত খালিদ। তাঁর মুক্তি আবার বিপদের কারণ হতে পারে বলে যুক্তি ছিল পুলিশের। সোমবার বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই মামলায় কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, ওই দোষীর মুক্তি বিপজ্জনক হবে। ২০২৩ সালে ‘সেনটেন্স রিভিউ বোর্ড’ সব দিক বিবেচনা করে তাই মুক্তির নির্দেশ বাতিল করেছে। আদালত মনে করছে সেই সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত। সিঙ্গল বেঞ্চ মুক্তির যে নির্দেশ দিয়েছিল তা বাতিল করা হল।
১৯৯৩ সালের ১৫ মার্চ কলকাতার বৌবাজারের একটি বাড়িতে মজুত বোমায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। বাড়িটি ছিল সাট্টা ডন রশিদ খানের। ওই ঘটনায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকে আহত হন। বিস্ফোরণে যুক্ত থাকার অভিযোগে রশিদের পাশাপাশি খালিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০১ সালে বিশেষ আদালত (টাডা কোর্ট) তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়। রশিদেরও একই সাজা হয়েছিল। গ্রেফতারের পরে প্রায় ৩২ বছর ধরে জেলে রয়েছেন খালিদ। মাঝে কয়েক বার তাঁকে প্যারোল দেওয়া হয়। তাঁর বয়স হয়েছে, শরীরও খারাপ তাই তিনি আগাম মুক্তি চেয়েছিলেন। গত বছর হাই কোর্টে ওই মর্মে মামলা দায়ের করেছিলেন। এর পরে সিঙ্গল বেঞ্চ তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে।
কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য তথা কলকাতা পুলিশ। রাজ্যের আইনজীবী সুমন সেনগুপ্তের যুক্তি ছিল, খালিদ একজন গুরুতর অপরাধে দোষী। ওই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেকের প্রাণ গিয়েছে। কুখ্যাত অপরাধী রশিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ফলে খালিদ মুক্তি পেলে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন, তাতে সমাজের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি, তাঁর মুক্তি নিয়ে মামলার সাক্ষীরা পর্যন্ত ভয় পাচ্ছেন। দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘আজীবন কারাদণ্ড’ মানে সারা জীবনের জেল। তবে সরকার চাইলে নিয়ম মেনে আগে ছাড়তে পারে। অকাল মুক্তি কোনও অধিকার নয়, শুধু আবেদন করার সুযোগ। পুলিশের যুক্তি মেনে ‘সেনটেন্স রিভিউ বোর্ড’ যে হেতু আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। তাই আদালত ওই সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করছে।