Advertisement
E-Paper

দিনভর গাড়িতেই বসে, কেমো দেওয়া গেল না শিশুদের

অর‌ণ্যের মা ঝুমা দেবী, নিশার বাবা ঘনশ্যামেরা জানালেন, কী কষ্ট করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে তাঁরা সন্তানদের চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে ফের কবে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের কেমো দেওয়ার দিন পাবেন, সেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে সকলকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৪০
অপেক্ষায়: এন আর এসের গেটের বাইরে গাড়িতে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুরা। মঙ্গলবার কেমোথেরাপি না নিয়েই তাদের ফিরে যেতে হয়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অপেক্ষায়: এন আর এসের গেটের বাইরে গাড়িতে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুরা। মঙ্গলবার কেমোথেরাপি না নিয়েই তাদের ফিরে যেতে হয়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেন গেটের সামনে ট্রামলাইনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছাই রঙের একটি গাড়ি। তাতে বসে রয়েছে বাঁকুড়ার সারেঙ্গার বাসিন্দা বছর পাঁচেকের অরণ্য সিংহ, সাত বছরের রুনু লোহার, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা চার বছরের নিশা কুমারী, মালদহের রতুয়ার বাসিন্দা বছর পাঁচেকের জাহিরউদ্দিন। তারা সকলেই ক্যানসার আক্রান্ত। স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থা তাদের নিয়ে এসেছে চিকিৎসা করাতে। কেউ একটা কেমো নিয়েছে, কেউ বা দু’টো। এ দিন তাদের ফের কেমো নেওয়ার দিন। হাসপাতালের গেটের সামনে অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারেরা টানা স্লোগান দিয়ে চলেছেন কাজ বন্ধ রেখে। এটাই ছিল জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজনের ভোগান্তির প্রতীক চিত্র।

অর‌ণ্যের মা ঝুমা দেবী, নিশার বাবা ঘনশ্যামেরা জানালেন, কী কষ্ট করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে তাঁরা সন্তানদের চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে ফের কবে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের কেমো দেওয়ার দিন পাবেন, সেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে সকলকেই। একই অবস্থা জঙ্গিপুরের বাসিন্দা পাঁচ বছরের ঐক্য দাসের অভিভাবকের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির প্রতিনিধি জানালেন, এই পরিস্থিতিতে ওইটুকু ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। গাড়িতে বসে থাকলে শিশুরা রোদের তেজে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

হলদিয়ার দুর্গাচক থেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে তিন মাসের শিশুপুত্র অর্ণব বারুইকে হাসপাতালে ‘চেক-আপ’ করাতে নিয়ে এসেছেন বাবা মাধব। জন্ডিসে আক্রান্ত শিশুটিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে রেখে মাধব গেটের বাইরে থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি কখন উঠবে বা আদৌ উঠবে কি না। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘বেসরকারি পরিবহণ সংস্থায় সামান্য বেতনে কাজ করি। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কথা গাড়ির মালিক কি বুঝবে? তিনি তো কড়ায় গন্ডায় তিন হাজার টাকা বুঝে নেবেন।’’

হলদিয়া থেকে আসা জন্ডিস আক্রান্ত অর্ণব বারুই। মঙ্গলবার, এন আর এসে। নিজস্ব চিত্র

বালুরঘাট থেকে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মেয়ে নুসরত মণ্ডলকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন বাবা ইসলাম মণ্ডল। প্রতি মঙ্গলবার এই হাসপাতালেই ‘চেক-আপ’ হয়। অসহায় ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের মতো রোগীর অভিভাবকদের কথা কেউ ভাববেন না!’’

বন্ধ জরুরি বিভাগও। এ দিন হাসপাতালের কোনও ওয়ার্ডেই জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজ করেননি। পারভিনা বিবির ছেলে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ক’দিন ধরেই। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত। এ দিন রক্তপরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পারভিনা বলেন, ‘‘রক্ত তো নেয়ইনি। উল্টে খাবারও পায়নি ছেলেটা।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোনও বিভাগেই কাজ হয়নি। সিনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, জুনিয়রেরা সাহায্য না করলে তাঁদের পক্ষে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বিক্ষোভকারী চিকিৎসদের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে, জরুরি বিভাগের পাশে বসে রোগী দেখা হচ্ছে।’’ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের পাশে ত্রিপলের তলায় বসে স্লোগান দিচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা মারধর করেছেন এবং নিষ্ক্রিয় পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’’

Children Chemotherapy NRS Hopsital Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy