কোনও রকম পরিচয়পত্র না দেখেই থাকতে দেওয়া হত অতিথিদের! পটনাকাণ্ডে পাঁচ গ্রেফতারির পর এমনটাই অভিযোগ উঠল কলকাতার আনন্দপুরের সেই গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে ওই গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
রবিবার সূত্র মারফত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আনন্দপুরের মাদুরদহ এলাকায় অবস্থিত ওই গেস্ট হাউসে নিরাপত্তায় বেশ কিছু অনিয়ম ছিল। আরও অভিযোগ ওঠে, প্রায়ই অতিথিদের পরিচয়পত্র ভাল করে খতিয়ে না দেখেই থাকতে দেওয়া হত অতিথিদের। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াও বেশ কয়েক জনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার যাঁরা গেস্ট হাউসে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের নথি মেলেনি। এঁরা গেস্ট হাউসে কোনও পরিচয়পত্রও জমা দেননি। কিন্তু অন্য অতিথিদের মতোই বহাল তবিয়তে থেকেছেন তাঁরা! এর পরেই গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে আনন্দপুর থানার পুলিশ। সরকারি নির্দেশ অমান্য করার জন্য ওই অতিথি আবাসের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২২৩(বি) ধারায়।
সংশ্লিষ্ট গেস্ট হাউসটি আনন্দপুর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। শনিবার রাতে সেখান থেকেই ধরা পড়েন পটনায় হাসপাতালে ঢুকে গ্যাংস্টারকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ জন। খুনের পর পটনা থেকে সটান কলকাতায় পালিয়ে এসে আনন্দপুরের অতিথি আবাসে উঠেছিলেন অপরাধীরা! শনিবার রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁদের আটক করে। যদিও সে সময় গেস্ট হাউসের মালকিন আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছিলেন, গেস্ট হাউসে যে-ই আসুন না কেন, সকলকে বৈধ পরিচয়পত্র দেখার পরেই ঘর দেওয়া হয়। ধৃতদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ওই পাঁচ জন শুক্রবার তাঁদের গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন। গেস্ট হাউসের তিন তলায় দু’টি ঘর দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। পাঁচ জনের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। তবে গেস্ট হাউস মালকিনের দাবি, সে সময় তাঁদের হাবভাব দেখে বোঝা যায়নি, সদ্য খুন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। পাঁচ জনের দলটিকে দেখে সন্দেহজনক বলেও মনে হয়নি গেস্ট হাউসের কর্মীদের।
আরও পড়ুন:
শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছ থেকে ফোন পান গেস্ট হাউস মালকিন। সঙ্গে সঙ্গে গেস্ট হাউসে যান মহিলার স্বামী ও পুত্র। তত ক্ষণে গোটা এলাকা ছেয়ে গিয়েছে সশস্ত্র পুলিশে। এর পর একে একে সন্দেহভাজনদের আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম সচিন সিংহ, হরিশ কুমার, তৌসিফ রাজা এবং ইউনুস খান।
আসল ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। সে দিন পটনার হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে আইসিইউতে ভর্তি থাকা চন্দন মিশ্র নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করে এক দল দুষ্কৃতী। নিহত চন্দন নিজেও গ্যাংস্টার ছিলেন। বিহারের বক্সারের বাসিন্দা চন্দনের বিরুদ্ধে ২৪টি ফৌজদারি মামলা ছিল। তার মধ্যে ১২টি মামলা খুনের। পুলিশের নিরাপত্তায় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল চন্দনের। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পুলিশের নজর এড়িয়ে এক দল দুষ্কৃতী হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে পড়ে। চন্দনকে গুলি করে খুনের পর দু’টি বাইকে চড়ে চম্পট দেয় তারা। ওই ঘটনায় এখনও তদন্ত চলেছে। সেই আবহে অভিযোগ উঠল কলকাতার গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধেও।