Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Police Administration

জেরায় ডেকে মারধর, কাঁচালঙ্কা খাওয়ানোয় অভিযুক্ত পুলিশ

সিঁথি এলাকায় তিনি এক আইনজীবীর বাড়ি-সহ কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন।

অভিযোগকারিণী: ভাঙা হাত নিয়ে গৌরী মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগকারিণী: ভাঙা হাত নিয়ে গৌরী মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১ ০৫:১৩
Share: Save:

জিজ্ঞাসাবাদের নামে এক প্রৌঢ়াকে থানার ঘরে বসিয়ে বেধড়ক মারধর এবং জোর করে কাঁচালঙ্কা খাওয়ানোর অভিযোগ উঠল সিঁথি থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। পেশায় পরিচারিকা ওই প্রৌঢ়ার অভিযোগ, তাঁকে তাঁর বিভিন্ন কাজের বাড়িতে ঘুরিয়ে পুলিশ চোর বলে দাবি করেছে। ঘটনার পরে অসুস্থ হয়ে পড়া ওই প্রৌঢ়াকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

গৌরী মণ্ডল নামে বারাসতের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়া জানান, সিঁথি এলাকায় তিনি এক আইনজীবীর বাড়ি-সহ কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর দাবি, গত রবিবার তিনি ওই বাড়ি থেকে বেতন নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মালঞ্চে দেশের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাই সোমবার কাজে না গিয়ে মঙ্গলবার ওই আইনজীবীর বাড়িতে কাজে যান।

গৌরীদেবী জানিয়েছেন, ওই দিন তিনি যখন উকিলের বাড়িতে ঘর মোছার কাজ করছিলেন, সেই সময়ে পুলিশ সেখানে যায়। মহিলা পুলিশও সঙ্গে ছিল। উকিলের বাড়ি থেকে তাঁকে টেনে বার করে নিয়ে পুলিশ গাড়িতে তোলে। বার বার জিজ্ঞাসা করা হয় সোনার হার কোথায়, দুল কোথায়। তাঁর কথায়, “পুলিশকে আমি বলি যে আমি কিছু জানি না।’’

প্রৌঢ়ার পুত্রবধূ নন্দিতা মণ্ডলের দাবি, সিঁথি থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁর শাশুড়ির উপরে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে। শাশুড়ির হাত ভেঙে গিয়েছে। শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে গৌরীদেবীকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। শনিবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন।

এ দিন গৌরীদেবী বলেন, “পুলিশকে বার বার বলেছি, আমি চুরি করিনি। কিন্তু পুলিশ আমার কথা শুনতে চায়নি। মঙ্গলবার উকিলের বাড়ি থেকে আমায় তুলে নিয়ে গিয়ে সারা দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি যে সব বাড়িতে কাজ করি, সেই সব বাড়িতে আমায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ তাঁদের বলে যে আমি চোর।’’ ওই প্রৌঢ়াকে নিয়ে পুলিশ তাদের বাড়ি গিয়েছিল বলে একটি পরিবার স্বীকারও করেছে।

মঙ্গলবার রাতেই অবশ্য প্রৌঢ়ার ছেলেরা আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পরে গৌরীদেবীকে ছেড়ে দেয় সিঁথি থানার পুলিশ। কিন্তু বুধবার ফের তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়।

অভিযোগ, সেই দিন অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। প্রৌঢ়ার দাবি, দু’-তিন জন পুরুষ পুলিশকর্মী আর এক
জন মহিলা পুলিশকর্মী ছিলেন ওই দিন। থানার একটি ঘরে বসিয়ে ফের জানতে চাওয়া হয় হার, দুল কোথায়। তাঁর অভিযোগ, মহিলা পুলিশ আমার গালে পরের পর চড় মারতে থাকেন। আমার হাত মুচড়ে দেন। এক সময়ে কয়েকটা কাঁচালঙ্কা আমার মুখে পুরে দেওয়া হয়। আমি মুখ থেকে ফেলে দিই। এর পরে থানার ঘরে থাকা পুরুষ পুলিশেরা আমায় বলেন, বাথরুমে নিয়ে গিয়ে গোপনাঙ্গে শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ঘষে দেবেন।’’ প্রৌঢ়ার দাবি, তাঁর হাতে চোট ছিল। পুলিশ হাত মুচড়ে দেওয়ায় হাতটা ভেঙে যায়।

ঘটনার প্রতিবাদে ওই প্রৌঢ়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ গৃহ পরিচারিকা সমিতি’। সংগঠনের সদস্য তহমিনা মণ্ডল বলেন, ‘‘জানতে পারা গিয়েছে, ওই আইনজীবী গৌরীদেবীর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করেছেন। সিঁথি থানার পুলিশের বিরুদ্ধে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেব আমরা। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাও করব।’’

এই ঘটনাকে চরম অন্যায় বলে ব্যাখ্যা করছেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা অত্যন্ত অন্যায়। এই ভাবে কারও থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা আইনত নিষিদ্ধ। এমনটাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। গরিব বলে এই ধরনের মানুষের উপরে সহজে অন্যায় হয়ে যায়। এই ভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়ে সম্মানহানি করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ওঁরা চাইলে আদালতে মামলা করতেই পারেন। মানবাধিকার কমিশন কিংবা মহিলা কমিশনেও অভিযোগ জানাতে পারেন।’’

ঘটনা নিয়ে জানতে গৃহকর্তা ওই আইনজীবীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে যা বলার বলেছি। পুলিশ কী করেছে জানি না। পুলিশকেই জিজ্ঞাসা করুন।’’

এ নিয়ে কথা বলতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) জয়িতা বসুকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অভিযোগ উড়িয়ে সিঁথি থানার ওসি অনিমেষ হাওলাদারের পাল্টা দাবি, ‘‘মিথ্যে বলছেন ওঁরা। কলকাতা পুলিশ এই ধরনের কোনও কাজ করে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

torture Police Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE