জল-রুদ্ধ: মুক্তারামবাবু স্ট্রিট। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
সব মিলিয়ে আধ ঘণ্টার মতো বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাতেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে গেল। যদিও খুবই অল্পক্ষণের জন্য। তবে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিতেই যে ভাবে জল জমেছে বিভিন্ন রাস্তায়, তাতে বর্ষা পুরোপুরি এলে কী হবে, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। কলকাতা পুরসভার অবশ্য দাবি, আধ ঘণ্টায় শহরের কয়েকটি জায়গায় ভালই বৃষ্টি হয়েছিল। তাই অল্পক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে জল জমেছে।
এ দিন দুপুরের বৃষ্টিতে উত্তর ও মধ্য কলকাতার একাধিক রাস্তায় জল জমে যায়। দক্ষিণ কলকাতায় তুলনামূলক ভাবে কম বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু যে ভাবে অল্প বৃষ্টিতে এ দিন ঠনঠনিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ বর্ষার মানচিত্রে ‘চিহ্নিত’ এলাকাগুলিতে জল জমেছে, তাতে এ বছরও জল জমার পুরনো রোগ ভোগাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন নগর পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের একাংশ। লালবাজার সূত্রের খবর, রাস্তায় জল জমে থাকায় মধ্য এবং উত্তর কলকাতায় যানজট তীব্র আকার নেয়। বিধান সরণি, বিটি রোড, পোস্তা, ব্রেবোর্ন রোড, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট ও সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের মতো বেশ কিছু রাস্তায় গাড়ি আটকে ভোগান্তি হয় অনেকের। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরের বৃষ্টির জের চলে রাত পর্যন্ত। অফিসের ব্যস্ত সময়ে নাজেহাল হন নিত্যযাত্রীরা।
কলকাতা পুরকর্তাদের একাংশের অবশ্য দাবি, শহরের অনেক জায়গাতেই এ দিন ১২ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেখানেই সাময়িক ভাবে জল জমেছে। এখন শহরের নিকাশির ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী, ১২ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই জল জমবে। ফলে এ দিনও তেমনটাই হয়েছে। পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ঠনঠনিয়ায় এ দিন আধ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৩৩ মিলিমিটার। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘নিকাশি পাইপলাইনগুলির যেখানে আধ ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টির জল নেওয়ার ধারণ ক্ষমতা আছে, সেখানে ৩৫ মিনিটে বৃষ্টি হয়েছে ৩৩ মিলিমিটার। ফলে একটু জল তো জমবেই।’’ নিকাশি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ তারক সিংহ বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলে জল অল্প জমবেই। কিন্তু কতক্ষণের মধ্যে জল নামছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যে সব জায়গায় গোড়ালি পর্যন্ত ডোবেনি, সেখানে জল জমেছে বললে তো হবে না!’’
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। ছবি: সুমন বল্লভ।
নগর পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন থেকেই সতর্ক না হতে পারলে জল জমার পুরনো রোগই ফের এ বছর বর্ষায় দেখা যাবে। তাঁদের বক্তব্য, শহরে নিকাশির পাইপলাইনের উচ্চতার মধ্যে পার্থক্য আছে। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উঁচু জায়গার জল এসে নিচু জায়গার নিকাশিনালায় জমা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির নিকাশিনালা সে কারণে সব সময়েই জল ভর্তি থাকছে। ফলে বৃষ্টি হলেই এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে যাচ্ছে। নগর পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘নিচু জায়গার নিকাশিনালা সব সময়েই জল ভর্তি হয়ে থাকছে। তাই বৃষ্টি হলেই জল জমছে। যতক্ষণ না উঁচু এলাকার নিকাশিনালা থেকে জল দ্রুত বেরোনোর ব্যবস্থা করা হবে, ততক্ষণ জমা জলের সমস্যা থেকেই যাবে।’’ আর এক নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘রাস্তায় যে সংখ্যক ঝাঁঝরি থাকার দরকার, তত সংখ্যক নেই। নগর পরিকল্পনার একাধিক রিপোর্টে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। পর্যাপ্ত সংখ্যক ঝাঁঝরি যদি করা যায়, তা হলে অল্প বৃষ্টিতে জল জমার সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy