—প্রতীকী চিত্র।
নজিরবিহীন ভাবে মেডিক্যালের স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা (এমবিবিএস ফাইনাল) চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রে আচমকা নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল! এর জন্য সংস্থার সদস্য-চিকিৎসকদের নিয়ে দু’টি দল তৈরি করা হয়েছে! তারা যথাক্রমে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পরিদর্শন চালাবে। আজ, বুধবার এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
গত ৪ মার্চ এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিসরে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এ ভাবে এমবিবিএস পরীক্ষায় পরিদর্শন বা নজরদারি চালাতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যেই। সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা আর বিতর্ক।
সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন, গত কয়েক বছর ধরে এমবিবিএস পরীক্ষায় গণ-টোকাটুকি, মোবাইল দেখে উত্তর বলে দেওয়া বা প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ লাগাতার উঠছে। এ বারও লোকচক্ষুকে ধোঁকা দিয়ে টোকাটুকিতে সাহায্য করার লক্ষ্যেই তৃণমূলপন্থী রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এই পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা পরিদর্শনের নামে আসলে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে শাসকদল-ঘনিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদের উত্তর বলে দেবে বা টোকাটুকিতে সাহায্য করবে। মূলত চিকিৎসকদের উত্তরবঙ্গ লবি এর পিছনে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যাক্ট, ১৯১৪ (সংশোধিত)-র ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, তারা এই পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিলের ‘অতি বিশেষ’ (এক্সট্রাঅর্ডিনারি) বৈঠকে। কিন্তু সেখানেও অভিযোগ উঠছে, আইন সংশোধন নিয়ে আলোচনা অতি বিশেষ বৈঠকে হতে পারে না। তার জন্য জেনারেল বডি মিটিং ডাকা দরকার। সেটা কি আদৌ হয়েছিল? এ ব্যাপারে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা সুদীপ্ত রায়কে একাধিক বার ফোন করে ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করেও উত্তর মেলেনি।
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাজ তো চিকিৎসকদের পাশ করার পরে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া এবং কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লে তা খতিয়ে দেখা। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তারা করবে কেন? কেনই বা স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করছে না? তাদের তো আলাদা পরিদর্শক থাকেন। তাঁরা তা হলে কী করবেন?
এমনিতেই দীর্ঘদিন উপাচার্যবিহীন হয়ে থাকা স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। তার উপরে এখন অভিযোগ উঠছে, ইচ্ছা করে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠুঁটো করে রেখে শাসকদলের প্রভাবযুক্ত মেডিক্যাল কাউন্সিল গোটা এমবিবিএস পরীক্ষা ব্যবস্থা নিজেদের কব্জায় আনতে চাইছে। এমন একাধিক চিকিৎসককে কাউন্সিলের নবগঠিত পরিদর্শক দলে রাখা হয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে নিকট অতীতে মেডিক্যাল পরীক্ষায় গণ-টোকাটুকিতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে এবং যাঁরা এখনও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি বা মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। তাঁরা কী ভাবে পরীক্ষার পরিদর্শক দলে জায়গা পেতে পারেন?
রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য দেবাশিস বসু এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন, ‘‘রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল তো একটি আইনের উল্লেখ করে জানিয়েছে যে, সেই আইনের ধারা অনুযায়ী তারা পরিদর্শন চালাতে পারে। আমি তো আইন বিশেষজ্ঞ নই, ফলে সেটা ঠিক না ভুল বলতে পারব না। ওরা আলাদা স্বাধীন সংস্থা, আমরা আলাদা সংস্থা। ওরা ওদের মতো কাজ করবে। ওরা তো আমাদের অধীনে নয়। তাই ওদের বাধা দেব কী করে? আমরা আমাদের মতো কাজ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy