Advertisement
২২ মে ২০২৪
new born baby

মা-হারা একরত্তিকে নিয়ে চিন্তা বাবার

স্ত্রী-বিয়োগের পর থেকে শুধু একটাই চিন্তা, কী ভাবে সামলাবেন তাঁর ‘পুচকু’কে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাখি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

জন্মের পরে সে মায়ের স্পর্শ পায়নি। পরের দিন থেকে সেই সুযোগও থেমে গিয়েছে চিরতরে। কারণ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ভেন্টিলেশনে থাকা মায়ের। তবে ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু)-এ আপাতত সুস্থ রয়েছে পাঁচ দিনের একরত্তি। হাসপাতালের খাতায় তার এখনও পরিচয় ‘বেবি অব রাখি মণ্ডল বিশ্বাস’।

বনগাঁর বাসিন্দা, পেশায় স্কুলশিক্ষক সজল বিশ্বাস এখনও মেয়ের নাম রাখতে পারেননি। স্ত্রী-বিয়োগের পর থেকে শুধু একটাই চিন্তা, কী ভাবে সামলাবেন তাঁর ‘পুচকু’কে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাখি। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকায় ওই অন্তঃসত্ত্বাকে বাইপ্যাপ দিয়ে রাখা হয়েছিল। তাঁকে যাতে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যায়, সে জন্য সিজ়ারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাখিকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সেই অবস্থাতেই গত ২১ জুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে ৩২ বছরের ওই বধূকে প্রসব করান চিকিৎসকেরা। পরের দিন ভোরে মৃত্যু হয় রাখির।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, জন্মের পরেই দেড় কেজি ওজনের ওই কন্যাসন্তানকে নিকু-তে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হওয়ায় তাকে সি-প্যাপ দেওয়া হয়েছে। শিশু-রোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানান, ‘লো-বার্থ ওয়েট ফর্মুলা’য় ওরো-গ্যাস্ট্রিক টিউবের মাধ্যমে শিশুটিকে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তাতে সাড়া দিচ্ছে সে। তার সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড। শিশুটির কোভিড রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে। তবে আরও কয়েক দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর সেই একরত্তি মেয়ের জন্যই এখন হাসপাতাল চত্বরে সময় কাটছে পরিজনেদের।

মেয়ের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন সজলবাবু। কিন্তু ভুলতে পারছেন না রাখির কথা। বলছেন, “আমাদের দশ বছরের একটা ছেলে আছে। তাই দু’জনেরই খুব শখ ছিল, মেয়ে হবে। তাই হল, কিন্তু রাখি জানতেও পারল না।’’ বাড়ি নিয়ে গিয়ে কী ভাবে সামলাবেন মেয়েকে? বিষয়টি নিয়ে চিন্তা যে হচ্ছে, তা স্বীকার করছেন ইতিহাসের শিক্ষক সজল। জানাচ্ছেন, তাঁর বোনেরা আগ্রহী ওই শিশুকে মানুষ করতে। অন্য দিকে শিশুটির মামা সমরেশ মণ্ডল বলছেন, “ভাগ্নিকে মানুষ করতে যেমন সহযোগিতা দরকার, সব করব।’’ কিন্তু সজল বলছেন, “ওকে আমিই বুকে আগলে রাখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata new born baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE