Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

coronavirus: শেষ লগ্নে কড়া বিধিনিষেধে আদৌ কতটা কাজ হবে, প্রশ্ন

প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সব চেয়ে বেশি উদ্বেগ কলকাতাকে নিয়ে।

বেলাগাম: করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটায় ফের চালু হচ্ছে বিধিনিষেধ। তবে শহরবাসীর একাংশকে রবিবারও সচেতন হতে দেখা গেল না।

বেলাগাম: করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটায় ফের চালু হচ্ছে বিধিনিষেধ। তবে শহরবাসীর একাংশকে রবিবারও সচেতন হতে দেখা গেল না। কসবার একটি মলে ভিড়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৪
Share: Save:

‘বারুদের স্তূপে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ফেললে, বিস্ফোরণ তো হবেই!’ গত কয়েক দিনে কলকাতার রাস্তা থেকে দ্রষ্টব্য স্থলগুলিতে অনিয়ন্ত্রিত বেপরোয়া ভিড় সেই জ্বলন্ত কাঠির কাজই করেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ। এখন নিয়ন্ত্রণ-বিধি আরোপ করে বিস্ফোরণের ভয়াবহ আগুনে জল ঢেলে কতটা ক্ষতি আটকানো সম্ভব, সেটাই বড় প্রশ্ন।

প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সব চেয়ে বেশি উদ্বেগ কলকাতাকে নিয়ে। কারণ, শেষ কয়েক দিনে রাজ্যে যত জন আক্রান্ত হয়েছেন, তার প্রায় অর্ধেকই শহরের। রবিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ শনিবার রাজ্যে আক্রান্ত ৬১৫৩ জন। তার মধ্যে কলকাতার বাসিন্দাই ৩১৯৪ জন। যা রাজ্যের মোট আক্রান্তের ৫১.৯০ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের আরও একটি পর্যবেক্ষণ হল, রাজ্যের দৈনিক পজ়িটিভিটি রেট (সংক্রমণের হার) গড়ে ৩ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেলেও, কলকাতার ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি থাকছে। শনিবারের আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে শহরের পজ়িটিভিটি রেট ছিল ৩৩.১৮ শতাংশ। যা শুক্রবারের (২৬.০২ শতাংশ) চেয়ে গড়ে সাত শতাংশ বেশি।

বছর শেষের সাত দিন এবং নতুন বছরের শুরু থেকে রবিবার পর্যন্ত শহরে আলিপুর চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন পার্ক এবং দ্রষ্টব্য স্থলগুলিতে ভিড় উপচে পড়েছিল। তার সঙ্গেই ছিল পার্ক স্ট্রিট থেকে বিভিন্ন রেস্তরাঁ এবং শপিং মলের ভিড়। ১ জানুয়ারির পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চিড়িয়াখানা, ইকো পার্ক, সায়েন্স সিটি, জাদুঘর, নিক্কো পার্ক—এই পাঁচটি জায়গা মিলিয়ে ভিড় করেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ। এক চিকিৎসকের কথায়, “এক দিনের ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বাকি দিনগুলির অবস্থা কী ছিল। শুধু তো এই পাঁচ জায়গা নয়, শহরের বাকি জায়গা এবং রাস্তার ভিড় মিলিয়ে সংখ্যাটা দৈনিক বোধ হয় কয়েক লক্ষ।’’ এই ভিড়ের কারণেই শহরের প্রতিদিনের পজ়িটিভিটি রেট তরতরিয়ে বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানান, এখন যত জন আক্রান্ত হচ্ছেন, তার মধ্যে বেশির ভাগ উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশও যদি পজ়িটিভ থাকেন, তা হলে ওই ১ লক্ষ ৮০ হাজার লোকের মধ্যে অন্তত ১৮ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত বলে ধরে নিতে হবে। আর তাঁরা হয় উপসর্গহীন, কিংবা মৃদু উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোভিড-বিধি না মেনে ভিড়ে ঘুরে বেড়ানো লোকজনের একটা বড় অংশ তাঁদের থেকে সংক্রমিত হয়ে আবার বাড়িতে, পাড়ায় গিয়ে পরে রোগ ছড়াচ্ছেন।

দীপ্তেন্দ্রবাবু আরও বলেন, “অতিমারির গোষ্ঠী সংক্রমণ তো ঘটেছেই, সেটিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এই ভিড়। সরকার যেখানে আপ্রাণ চেষ্টা করছে পুরো লকডাউন না-করার, সেখানে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ধ্বংসের মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তাঁরা কোভিড বিধি না মেনে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন, আবার সরকার ব্যবস্থা নিলে তারও সমালোচনা করছেন।’’ তবে চিকিৎসকদের মত, সরকারি নির্দেশিকা খাতায়কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে কাজ হবে না। যেমন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় বলেন, “শুধু নিয়ম করলেই হবে না, তা প্রয়োগে কড়া মনোভাব নিতে হবে। মাস্ক পরতে হবে বলা হচ্ছে, কিন্তু সেটা যাতে সকলে পরেন, তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া হতে হবে।’’ তাঁর কথায়, “যা বিপদ ঘটার, তা কিন্তু প্রায় ঘটে গিয়েছে।’’

তবে শহরে আক্রান্তদের মধ্যে সকলে ওমিক্রনে আক্রান্ত নয় বলেও কিন্তু জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলছেন, “ওমিক্রনের সংক্রমণ রাজ্যে খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং পুরনো স্ট্রেন অর্থাৎ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই শহরে ঊর্ধমুখী সংক্রমণের প্রধান কারণ কোভিড-বিধি পালনে মানুষের উদাসীনতা।’’ অনির্বাণবাবু এবং অন্য চিকিৎসকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, ডেল্টার দোসর হয়ে ওমিক্রন প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলে সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাবে, চাপ তৈরি হবে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে। তাই সংক্রমণ আয়ত্তের মধ্যে রাখতে সরকার যেমন বিধিনিষেধ জারি করেছে, তেমন মানুষকেও কঠোর ভাবে বিধি মানতে হবে।

কিন্তু এখন কঠোর হয়েও, শেষ কয়েক দিনের উন্মাদনার ফলাফলকে আদৌ আটকানো সম্ভব হবে কি? তা নিয়ে কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE