মানে না মানা: দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখেই চৈত্র সেলের ভিড়। অনেকের মুখে দেখা গেল না মাস্ক। রবিবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
অতিমারি পর্বে প্রথমে মুখ থুবড়ে পড়ার পরে আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল পর্যটন শিল্প। করোনার প্রথম অভিঘাতের ধাক্কা কিছুটা সামলে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল এই শিল্প। পর্যটন সংস্থাগুলির আধিকারিকেরা মনে করেছিলেন, এ বছরে গরম ও পুজোর ছুটিতে বেড়ানোর বুকিং হবে ভালই। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে প্রায় গুঁড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ।
গত বছর মার্চ থেকে প্রায় পুরো বছরটাই অধিকাংশ পর্যটন সংস্থার অফিস বন্ধ ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনার প্রকোপ কিছুটা কম হওয়ায় সেই অফিস ফের খুলতে শুরু করে। কিন্তু মার্চ থেকে ফের প্রতিদিন অফিস যাওয়া বন্ধ করেছেন শহরের বেশ কিছু পর্যটন সংস্থার কর্মীরা। শহরের একাধিক পর্যটন সংস্থার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বুকিং তো দূর অস্ত্, বেড়াতে যাওয়ার জন্য খোঁজখবর করতে যে সব ফোন আসে, এ বার তার সংখ্যাও নগণ্য। অন্যান্য বছরে এই সময়ে গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বুকিং প্রায় পুরোটাই হয়ে যায়। অথচ এ বার প্রায় কিছুই হয়নি।
শহরের এক পর্যটন সংস্থার কর্ণধার শুভ্র মুৎসুদ্দি বলেন, ‘‘বেশ কিছু রাজ্যে বেড়াতে গেলে এখন আগে করোনা পরীক্ষা করিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এই পরীক্ষায় যদি কারও শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে তাহলে বুকিং বাতিল করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে বেশ কিছু রাজ্যে পর্যটকদের জন্য নানারকম বিধিনিষেধও রয়েছে। রয়েছে নৈশ কার্ফুও। ফলে এত বিধিনিষেধ মেনে অনেকেই বেড়াতে যেতে চাইছেন না।’’ শুভ্র জানাচ্ছেন, অন্য বছরে গরমের ছুটিতে পাহাড়ে, বিশেষত সিকিমে পাড়ি জমান বাঙালিরা। কিন্তু এখন সিকিমে ঢুকতে গেলেও করোনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। রয়েছে নৈশ কার্ফুও। ফলে ইচ্ছে থাকলেও বাধ্য হয়ে সিকিমের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন অনেকে।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে পড়ুয়াদের শিক্ষামূলক ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা একটি পর্যটন সংস্থার তরফে জয় মিত্র বলছেন, ‘‘গত বছর কোনও স্কুল বা কলেজ থেকে বেড়াতে যায়নি। এ বার ফেব্রুয়ারিতে স্কুল আংশিক খোলায় ভেবেছিলাম, গরমে হয়তো কয়েকটি স্কুল-কলেজ থেকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার বরাত পাব। কিন্তু এখন তো স্কুল কার্যত বন্ধ, কলেজও খোলেনি। বেড়াতে কে যাবে?’’
আর এক পর্যটন সংস্থার আধিকারিক রাখাল দাশ জানাচ্ছেন, শুধু পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাওয়াই নয়। অফিসের কাজের সূত্রে ভিন্ রাজ্যে যেতে হয় অনেককে। সে সব ক্ষেত্রে অফিসের কর্মীদের জন্য হোটেল ঠিক করে দেওয়া থেকে শুরু করে ট্রেন বা বিমানের টিকিট কেটে দেওয়া— সবই করে দেন তাঁরা। ‘‘এই সব কনফারেন্স এখন অনলাইনে হচ্ছে। জানুয়ারিতে কনফারেন্স বুকিং কয়েকটা পেয়েছিলাম। কিন্তু আবার সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’— বলছেন রাখাল।
তবে এর মধ্যেও করোনা ভীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে আবাসনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সিকিম ঘুরে এসেছেন ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি বহুতলের বাসিন্দা সুশ্রী রায়। তাঁর কথায়, ‘‘নৈশ কার্ফু ছিল বলে রাতে
বেরোতে পারিনি। তবে দিনে ভালই ঘুরেছি। তবে মাস্ক পরে থাকতে হত। অনেক পর্যটককেই ওখানে দেখেছি। তবে আগে সিকিমে যতটা পর্যটকদের ভিড় দেখেছি, সেই তুলনায় এ বার ফাঁকা ছিল।’’
ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সচিব নীলাঞ্জন বসু বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি বা জানুয়ারিতে যারা বুকিং করেছেন, তাঁদের অনেকে মার্চে বেড়াতে গিয়েছেন। কাশ্মীরেও বুকিং হয়েছে সে সময়ে। কিন্তু গরমের ছুটির বুকিং এখনও প্রায় নেই-ই। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত প্রচুর মানুষ ইতিমধ্যে কর্মহীন হয়েছেন। পর্যটন শিল্পের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy