E-Paper

জাল ওষুধের রমরমা বাড়ছে, মানছে ব্যবসায়ী সংগঠনই

গুণগত মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার রাতেই নির্দেশিকা জারি করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৯
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। —প্রতীকী চিত্র।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়েই ওষুধের উপরে ছাড় দিচ্ছেন বহু ব্যবসায়ী। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশ তথা রাজ্যে জাল ওষুধের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু জাল ওষুধ চেনার উপায় ঠিক মতো জানা নেই সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও। শুক্রবার এমনই কথা স্বীকার করল ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’ (বিসিডিএ)।

গুণগত মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার রাতেই নির্দেশিকা জারি করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। বলা হয়েছে, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ব্যাচের ওষুধের তালিকা ও তথ্য সমস্ত সরকারি হাসপাতাল, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর, পাইকারি বিক্রেতা এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের নির্দেশিকা দিয়ে জানাতে হবে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। যাতে কোথাও ওই সব ওষুধ ব্যবহার না হয়।

‘সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’ (সিডিএসসিও) সূত্রের খবর, গত তিন মাসে প্রায় ৩০০টি ওষুধ গুণমানের পরীক্ষায় ফেল করেছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংস্থার তৈরি ওষুধও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। নির্দেশ হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল থেকে শুরু করে দোকানেও প্রকাশ্যে ঝোলাতে হবে অনুত্তীর্ণ সব ওষুধের তালিকা। তা রাখতে হবে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটেও। এর পরেও কোথাও ওই সব ওষুধ বেচাকেনা হচ্ছে কিনা, তাতে নজরদারি চালাতে দোকানে আচমকা পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে। গাফিলতি ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। রাজ্যের যে সমস্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তৈরি ওষুধ অনুত্তীর্ণের তালিকায় রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব।

বিসিডিএ-এর মুখপাত্র শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘জাল বা ভুয়ো ওষুধের সমস্যা গুরুতর। যা দেশের জনগণের স্বাস্থ্য এবং ওষুধ ব্যবসা, দু’টিরই ক্ষতি করছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।’’ তাঁদের অভিযোগ, ৩৫ শতাংশ জাল ওষুধ তৈরি হয় এ দেশে। মিশর এবং চিনেও জাল ওষুধ তৈরির রমরমা কারবার চলে।

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে ‘বিসিডিএ’-র তরফেও দাবি করা হয়, তাঁরা অবশ্যই চান, মানুষ সস্তায় ওষুধ কিনুন। কিন্তু সেটা কখনওই গুণগত মানের সঙ্গে আপস করে নয়। সংগঠনের কর্তারা জানাচ্ছেন, বড় ওষুধ ব্যবসায়ীরা ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা আনকোরা ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে ওষুধ কিনছেন। তাতেই সমস্যা বাড়ছে। বিসিডিএ-র সম্পাদক পৃথ্বী বসু বলেন, ‘‘ওষুধ সস্তায় পাওয়ার জন্য সবার আগে জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে। কেন্দ্রই একমাত্র পারে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার উপরে চাপ তৈরি করে দাম আয়ত্তে রাখতে। একই ওষুধের তিন জায়গায় তিন রকমের দাম কেন হবে?’’

শঙ্খ বলেন, ‘‘সম্প্রতি যে ওষুধগুলি অনুত্তীর্ণ হয়েছে, তার বেশির ভাগ হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। অল্প কিছু ওষুধ দোকানে বিক্রি হয়।’’ তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীরাও বুঝতে পারেন না জাল ওষুধ কোনটি। সংগঠনের কোনও সদস্য জাল ওষুধের কারবারে ধরা পড়লে সাসপেন্ড করা হয়। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জেলায় জেলায় প্রচার চালাবে বিসিডিএ। বিসিডিএ-র কর্তারা জানাচ্ছেন, দেশে মাত্র ৩০০টি ওষুধে বারকোড দেওয়া রয়েছে। কিন্তু তাতেও নকল হচ্ছে। জাল ওষুধ আটকাতে সিডিএসসিও-কে আরও কড়া হতে হবে বলেও দাবি বিসিডিএ-র। সেই কাজে তারাও ড্রাগ কন্ট্রোলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে জানায় সংগঠন ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

medicines Drugs

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy