কলকাতা পুরসভা বেআইনি নির্মাণ রুখতে এ বার আরও কড়া অবস্থান নিতে চলেছে। আদালতের নির্দেশে যদি কোনও অবৈধ নির্মাণ ভাঙার প্রক্রিয়া আটকে দেওয়া হয়, তবে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে এ বার থেকে উচ্চ আদালতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। শুক্রবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ওই অনুষ্ঠানে কালিকাপুর এলাকার এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, স্থানীয় এক ঠিকানায় বিল্ডিংয়ের নীচতলায় অবৈধ ভাবে দোকান তৈরি করা হয়েছে। পুরসভার তরফে যদিও সেই নির্মাণ ভাঙার অর্ডার জারি করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সেটি ‘রেগুলারাইজ়ড’ হয়ে যায়। অভিযোগ শুনে মেয়র সরাসরি বিল্ডিং বিভাগের ডিজির কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চান। জানা যায়, নির্মাণকারী আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ (স্টে অর্ডার) নিয়ে আসেন। আদালত বরো এগজ়িকিউটিভকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন এবং সেই বরো আধিকারিকই জরিমানার ভিত্তিতে নির্মাণটিকে বৈধ ঘোষণা করেন।
এই ঘটনা জানার পরেই ক্ষোভ উগরে দেন মেয়র। তিনি বলেন, “এ ভাবে আদালতের সামনে আমাদের মুখ পুড়ল। পুরসভার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হল! যে অফিসার ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনিই পরে রেগুলারাইজ়ড করে দিলেন কেন? তাঁকে শো-কজ় করা হয়নি কেন?” মেয়র আরও বলেন, “হাইকোর্ট কখনও বেআইনি নির্মাণের ঢাল হতে পারে না। আমাদের আদালতকে বিষয়টি বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে ডিভিশন বেঞ্চে, দরকারে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হবে।” ফিরহাদের বক্তব্যের পরই নড়েচড়ে বসেছে বিল্ডিং বিভাগ। বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেছেন, “আমরা পুরসভার ভাবমূর্তি রক্ষার পক্ষে। এর আগে নিম্ন আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে আমরা ডিভিশন বেঞ্চে যাইনি বলে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ বার থেকে আদালতের কোনও নির্দেশে যদি বেআইনি নির্মাণ ভাঙা আটকে দেওয়া হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে উচ্চ আদালতে আপিল করব।”
মেয়রের নির্দেশে কমিশনারকে সংশ্লিষ্ট ফাইল খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, পুরসভা এ বার বেআইনি নির্মাণ রুখতে প্রশাসনিক তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদেরও সতর্ক করা হয়েছে— বেআইনি নির্মাণে কোনও ভাবে ছাড় দিলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে পুরসভার প্রশাসনিক চক্রে এখন থেকেই বাড়ছে চাপ, কারণ মেয়রের নির্দেশে এ বার বেআইনি নির্মাণ রুখতে শুরু হচ্ছে আরও কঠোর অভিযান।