আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসিরহাটের দম্পতি। নিজস্ব চিত্র।
বয়সের কারণে হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। তা সত্ত্বেও প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ দেখাদেখতে শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন লুৎফার রহমান মণ্ডল। বরাবরের বাম সমর্থক ওই বৃদ্ধ এ দিন ট্রেনে করেশিয়ালদহে নেমে সেখান থেকে হেঁটে এসেছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। বসিরহাটের ভ্যাবলা এলাকার বাসিন্দা লুৎফারের সংসার চলে চাষ-আবাদ করে। এ দিন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বুদ্ধবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে বেরোনোর সময়ে বৃদ্ধ বললেন, ‘‘এলাকার সমস্যার কথা জানাতে ১৯৮৮ সালে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এসেছিলাম। উনি সব কথা মন দিয়ে শুনে সমস্যার সমাধান করেছিলেন। এত বড় মাপের এক জন মানুষ। আমরা দূর থেকে এলেও কিন্তু ফিরিয়ে দেননি। এই সৌজন্য ভোলার নয়।’’
শুধু লুৎফারই নন। এ দিন বসিরহাট এলাকার বহু মানুষ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এসেছিলেন তাঁদের প্রিয় নেতাকে চিরবিদায় জানাতে। বেরোনোর সময়ে সকলেরই চোখে ছিল জল।
যেমন, বসিরহাট পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী উৎপলকান্তি দাস ও তাঁর স্ত্রী আরতি দাস এসেছিলেন এ দিন। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে গাছের তলায় ঠায় বসেছিলেন তাঁরা। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই বাম সমর্থক। উৎপলের কথায়, ‘‘বর্তমানের অবক্ষয় আর দুর্নীতি-কলুষিত সমাজে ওঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে বেড়ে উঠুক যুব সমাজ। আমাদের এলাকায় বহু বার গিয়েছেন। নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেদ করে কথা বলেছেন। সে সব দিন কি ভোলা যায়?’’ আর আরতির সংযোজন, ‘‘২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার দিনে সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বুদ্ধবাবু। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথের গান (যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে) বাজছিল। মমতা নমস্কারের ভঙ্গিতে এগিয়ে আসতেই বুদ্ধবাবু দু’হাত তুলে প্রতিনমস্কার করেছিলেন। সৌজন্যের সেই ছবি স্মৃতিতে থেকে যাবে।’’
২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার পুরপ্রতিনিধি ছিলেন কল্যাণী মিত্র। এর মধ্যে ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শিক্ষা বিভাগের মেয়র পারিষদের দায়িত্বও সামলেছেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের বাসিন্দা কল্যাণী এ দিন এসেছিলেন আলিমুদ্দিনে। প্রসঙ্গত, বুদ্ধবাবুর জন্মও শ্যামপুকুরে। কথায় কথায় কল্যাণী জানালেন, তাঁর স্বামী শিশিরকুমার মিত্র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন। কল্যাণীর কথায়, ‘‘আমার বিয়ের পরের বছর (১৯৭৬) সবাই মিলে দেওঘর বেড়াতে গিয়েছিলাম। বুদ্ধবাবুও সঙ্গে ছিলেন। মনে পড়ছে, দেওঘরে হাঁটতে হাঁটতে বুদ্ধবাবু আবৃত্তি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি। আর আমি গেয়েছিলাম ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’।’’
প্রাক্তন এই পুরপ্রতিনিধির স্মৃতিচারণ, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। কত পড়াশোনা করতেন। সেটা বুঝতে পারতাম, স্বামীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার সময়ে। রবীন্দ্রনাথ যেন ছিল ওঁর কণ্ঠস্থ। মুখ্যমন্ত্রীর মতো গুরুদায়িত্ব সামলেছেন এত দীর্ঘ বছর। কিন্তু তার মধ্যেও সংস্কৃতির চর্চা ছাড়েননি। এই মূল্যবোধ এখনকার প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy