হাসপাতালের মতো শয্যা, অক্সিজেন, কার্ডিয়াক মনিটর, এক্স-রে, ইউএসজি-র ব্যবস্থাপনা। এত কিছু পেয়েও রোগী থাকবেন বাড়িতে। এমন পরিষেবা শুরু হয়েছে এ শহরেও। বাড়ি ফিরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও থাকছেন এই পরিষেবায়।
এই হোম কেয়ার পরিষেবা কতটা মধ্যবিত্তের নাগালে? যে সব হাসপাতাল ও সংস্থা পরিষেবা দিয়ে থাকে, তাদের খরচ অনেকটাই বেশি বলে দাবি গ্রহীতাদের। তবু এই পরিষেবার চাহিদা বাড়ছে। কারণ, হাসপাতালের থেকে তাদের খরচ কম বলেই দাবি এই পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির। চাহিদা মতো সংস্থার সংখ্যা বাড়লে, খরচও কমতে পারে।
জানা যাচ্ছে, সংক্রামক রোগের বদলে এখন নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। ওই সব রোগে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকতে হয়। আবার, অস্ত্রোপচার পরবর্তী বেশি দিন হাসপাতালে থাকাও সব দিকে ঝুঁকির। এমন রোগীর পরিবারই বাড়িতে যত্নের এই পরিষেবা নিতে চান। করোনায় নিভৃতবাসে পাঠানো রোগীর প্রয়োজনে চিকিৎসাও হচ্ছিল। সেটিও হোম-কেয়ার, জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
এমন পরিষেবা চালানো আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও রূপালি বসু বলেন, ‘‘প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের এই পরিষেবা চালু করা উচিত। তাতে দীর্ঘ দিন হাসপাতালে থাকার খরচ কমবে এবং জরুরি চিকিৎসায় শয্যা মিলবে।’’ হোম কেয়ার পরিষেবা দেওয়া শহরের এক হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট জয় বসু জানাচ্ছেন, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাড়িতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। স্ট্রোক, ক্যানসার, ডিমেনশিয়া বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় হোম কেয়ারে মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং দৈনিক কেমোথেরাপির খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা।
তবে হোম কেয়ারের উপযুক্ত প্রশিক্ষিত নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা এখনও অপ্রতুল, জানাচ্ছেন পূর্বাঞ্চলে হোম কেয়ার পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্ণধার প্রতীপ সেন। তাঁর মতে, দীর্ঘমেয়াদি রোগীর হাসপাতালে খরচ অনেক বেশি হয়। সেই পরিবারের পক্ষে হোম কেয়ার সুবিধাজনক। তবে এই খরচ স্বাস্থ্য বিমায় অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন বলেও তিনি জানাচ্ছেন। বয়স্কদের চিকিৎসায় যুক্ত চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘এখন দ্রুত রোগ নির্ণয় হচ্ছে। পরিচর্যার মাধ্যমে বয়স্ক মানুষটিকে অনেক দিন বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু লোকবল নেই বহু পরিবারে। তাই বাড়ছে হোম কেয়ারের চাহিদা। আরও সংস্থা এগিয়ে এলে, এর খরচ নাগালে আসবে।’’
হাসপাতালের সীমিত শয্যায় আরও রোগীকে পরিষেবা দিতেই হোম-কেয়ারের গুরুত্ব বাড়বে বলে মত বাইপাসের এক হাসপাতালের যুগ্ম ম্যানেজিং ডিরেক্টর অয়নাভ দেবগুপ্তের। তাঁর মতে, ‘‘হাসপাতালের দৈনিক খরচের থেকে এর খরচ কম। সংক্রমণের আশঙ্কাও কম।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)