Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

দুপুরেই বন্ধ হল পুরসভার ডেঙ্গি নির্ণয় কেন্দ্র

কোথাও আবার রোগীর পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বন্ধ থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই মানুষ রোগী নিয়ে ছুটছেন। কোন কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন কাউন্সিলারদের অনেকেই।

ডাক্তার কখন আসবেন, তারই অপেক্ষা। রবিবার, খিদিরপুর এলাকায় পুরসভার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ডাক্তার কখন আসবেন, তারই অপেক্ষা। রবিবার, খিদিরপুর এলাকায় পুরসভার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তার দেখাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে রোগীদের। এমতাবস্থায় কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি রবিবারও খোলা রাখার বি়জ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। কিন্তু সব নয়। পুর স্বাস্থ্য দফতরের নয়া বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক, ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৩৩টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু রাখতে হবে ছুটির দিনেও।

কিন্তু কীসের ভিত্তিতে এমন জরুরি পরিস্থিতিতে মাত্র ৩৩টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। রবিবার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ঘরে ঘরে জ্বর এমন ভাবে থাবা বসিয়েছে, তাতে ওই ৩৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেহাতই অপ্রতুল। কোথাও আবার দেখা গেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা, অথচ চিকিৎসক নেই। কোনও বরোয় আবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ডেঙ্গি নির্ণয় কেন্দ্র ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে মানুষ। রোগীকে নিয়ে মানুষ পাগলের মতো ছুটে যাচ্ছেন অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

কোথাও আবার রোগীর পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বন্ধ থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই মানুষ রোগী নিয়ে ছুটছেন। কোন কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন কাউন্সিলারদের অনেকেই। জ্বরের এই বাড়াবাড়ি অবস্থায় কেন পুরসভার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছুটির দিন খোলা থাকবে না, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও।

দক্ষিণ কলকাতার ওয়াটগঞ্জে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, জ্বরে আক্রান্ত এক যুবক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে শুয়ে আছেন। ওই যুবকের বাড়ির লোকেরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে জ্বর কমছে না। এ দিন পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক
না থাকায় তাঁকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে বলে জানান ওই যুবকের পরিজনেরা। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা, কিন্তু ডাক্তার নেই যে!’’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্তব্যরত এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘জ্বর নিয়ে কোনও রোগী এলে আমরা ৭৭, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’

এ দিন দুপুরে ওয়াটগঞ্জে কলকাতা পুরসভার ৭৬ নম্বর ওয়ার্ড হেলথ ইউনিটেও গিয়ে চোখে পড়ল একই ছবি। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ (কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ দফতর) চালু থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মীরা কেউ নেই।

কলকাতা পুর এলাকায় ১৪৪টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য প্রতিটি বরো এলাকায় একটি করে ডেঙ্গি নির্ণয়ক কেন্দ্র চালু হয়েছে। এমনই একটি কেন্দ্র রয়েছে ছ’নম্বর বরোর অন্তর্গত হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়ারে। নিয়মমতো রবিবারও ওই কেন্দ্র সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চালু থাকার কথা। কিন্তু এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তালাবন্ধ। এর পরে জ্বরে আক্রান্ত কোনও রোগী এলেও তাঁদের আর রক্তপরীক্ষা করানো যাবে না বলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে জানানো হয়।

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, রবিবারও প্রতিটি বরোয় ডেঙ্গি নির্ণয়ক কেন্দ্র সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্দিষ্ট সময়ের আগে বন্ধ হয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক, কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।

তবে শহরে জ্বর এবং ডেঙ্গি যখন ছড়াছে, তখন ছুটির দিনে মাত্র ৩৩টি ওয়ার্ডের ক্লিনিক চালু হওয়ায় সমালোচনা করেছেন পুরসভার বাম দল নেত্রী রত্না রায় মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলায় এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রত্যহ সব ওয়ার্ডেই হেলথ অফিস চালু রাখা উচিত। পুরসভা ডেঙ্গি পরিস্থিতি তেমন আমল দিচ্ছে না।’’ বিজেপি-র দলনেত্রী মীনাদেবী পুরোহিতের অভিযোগ, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে পুরসভা তথ্য চাপা দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন ছুটির দিনেও সব ওয়ার্ডেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু রাখা উচিত।’’

এ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ছুটির দিনে ১৪৪টি ওয়ার্ডেই হেলথ ক্লিনিক চালু রাখার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। ডাক্তারদের তো এক দিন বিশ্রাম দিতে হবে। যার জন্য আমরা রবিবার প্রতিটি বরো এলাকায় দু’টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। এতে অসুবিধা কোথাও হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE