E-Paper

মস্তিষ্কে বাসা খাদক অ্যামিবার, রোগীকে সুস্থ করল পিজি

পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই প্রৌঢ়ার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে অ্যামিবা। প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসার পরে ওই মস্তিষ্কখাদক (ব্রেন ইটিং) পরজীবীর হাত থেকে রোগীকে বাঁচিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠালো হাসপাতাল।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৮:২৩
এসএসকেএম হাসপাতাল।

এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

দিন সাতেক ধরে জ্বর কমছিল না। কাটছিল না আচ্ছন্ন ভাবও। শেষে পরিজনেরা বছর ঊনষাটের প্রৌঢ়াকে এসএসকেএমে এনে ভর্তি করেন। কিন্তু দিন কয়েক কাটতে না কাটতেই তিনি পুরো অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি স্থানান্তরিত করা হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ারে। পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই প্রৌঢ়ার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে অ্যামিবা। প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসার পরে ওই মস্তিষ্কখাদক (ব্রেন ইটিং) পরজীবীর হাত থেকে রোগীকে বাঁচিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠালো হাসপাতাল।

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সম্প্রতি এই ঘটনাকে নিয়ে গত কয়েক মাসে ‘অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফেলাইটিস’-এ আক্রান্ত যে দু’জন রোগী মিলেছিল, তাঁদের সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ওই প্রৌঢ়ার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, ১৯৬২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় ১৩৮ জন অ্যামিবা আক্রান্ত হয়েছেন বলে নথিভুক্ত আছে। আর ১৯৭৫ থেকে এখনও পর্যন্ত বিশ্বে ১২৫ থেকে ১৫০ জন ওই পরজীবীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার নথি রয়েছে। যার মধ্যে ৯০ শতাংশের শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটেছিল। তিনি বলেন, ‘‘ভারতে এমন ঘটনার কোনও তথ্য এখনও নথিভুক্ত নেই। তবে এই দু’টি ঘটনাই চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণাপত্রে প্রকাশের জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

হাওড়া বেলিলিয়াস রোডের বাসিন্দা শাবানা পরভিনের (৫৯) পরিজনেরা জানাচ্ছেন, জ্বর ও আচ্ছন্নতার সঙ্গে তাঁর শরীরের ডান দিক ঠিক মতো কাজ না করায় পিজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সিটি স্ক্যানে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, শাবানার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়েছে। প্রথমে তাঁকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলেও, শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হওয়ায় ওই প্রৌঢ়াকে সিসিইউ-য়ে স্থানান্তরিত করে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। সেখানেও তাঁর মারাত্মক রকমের খিঁচুনি হতে থাকে। অন্য দিকে, শাবানার শিরদাঁড়া থেকে জল নিয়ে পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তিনি ‘অ্যাকানথ্যামিবা’ প্রজাতির পরজীবীর সংক্রমণে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সেটি ছাড়াও এর আরও তিনটি প্রজাতি (নিগলেরিয়া, বালামুথিয়া, স্যাপিনিয়া) রয়েছে। সুগত বলেন, ‘‘ওই পরজীবী পুরো মাথা জুড়ে বাসা বাঁধার কারণেই মস্তিষ্কে মারাত্মক চাপ তৈরি হয়েছিল। সেই চাপ হৃৎপিণ্ড এবং শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের অংশে প্রভাব ফেললে আচমকা প্রাণহানির ঝুঁকি ছিল।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত পুকুর বা চৌবাচ্চার পরিষ্কার জলে থাকে অ্যামিবা। কোনও ভাবে জলের মাধ্যমেই তা নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। নাক ও মস্তিষ্কের সংযোগস্থলে (ক্রিব্রিফর্ম প্লেট) জালির মতো ফুটো থাকে। তা দিয়েই মস্তিষ্কে গিয়ে জাঁকিয়ে বসে ওই পরজীবী। এতে আক্রান্ত হলে যে ধরনের অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধের প্রয়োজন, তা সচরাচর পাওয়া যায় না। তখন বিদেশের ঘটনায় যে সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা থেকেই চারটি অ্যান্টিবায়োটিককে বাছাই করে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন সুগত-সহ ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ সামুই, মেডিসিনের শান্তশীল পাইন, সংক্রামক রোগের নাজ়নিন নাহার বেগম এবং স্নায়ুরোগের বিভাগীয় প্রধান অতনু বিশ্বাসের মেডিক্যাল বোর্ড। পাশাপাশি ঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাওয়ার পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই রোগী।

যদিও চিকিৎসকদের কাছে শাবানা দাবি করেছেন, তিনি কখনও পুকুরে স্নান করতে নামেননি। তবে চিকিৎসকদের মতে, হতে পারে কোনও সময়ে চৌবাচ্চার জল ব্যবহারের সময়ে ওই পরজীবী তাঁর শরীরে প্রবেশ করেছিল। সুগত বলেন, ‘‘বিরল, সংক্রমণের তীব্রতা এবং মারাত্মক প্রাণের ঝুঁকি— এই তিন চ্যালেঞ্জকে কাটিয়ে রোগীকে সুস্থ করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Hospital Amoeba Critical

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy