—প্রতীকী চিত্র।
আনন্দপুর ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযোগকারিণীর অভিযোগ আদৌ কতটা সত্যি, তা নিয়েই এ বার ধোঁয়াশা বাড়ছে। ষড়যন্ত্র করে প্রাক্তন প্রেমিককে ‘ফাঁসাতেই’ ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে কি না, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না লালবাজারের তদন্তকারীরা। আপাতত এ নিয়ে পুলিশকর্তারা স্পষ্ট করে কিছু না বললেও সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত এগোচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে।
বুধবার দিনভর নিখোঁজ থাকলেও রাতে খোঁজ মেলে আনন্দপুরের ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযোগকারী ওই তরুণীর। তিনি নিজেই আইনজীবীকে নিয়ে থানায় হাজির হন বলে জানিয়েছে লালবাজার। বৃহস্পতিবার তরুণীর দ্বিতীয় বার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে তার রিপোর্ট এখনও জানা যায়নি। এ ছাড়া, ঘটনার দিনে তরুণীর পরনে থাকা জামাকাপড়ও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। তবে হঠাৎ করে কেন তরুণী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নটি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। পুলিশের এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন তরুণীও। তাই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি তিনি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছেন?
সোমবার রাতে আনন্দপুরে ধর্ষণের ওই ঘটনা বুধবার নতুন ‘মোড়’ নিয়েছিল। অভিযোগকারিণীর খোঁজ মিলছে না বলে জানায় লালবাজার। এমনকি সে দিন আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতেও হাজির হননি তিনি। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত যুবক অপহৃত হয়েছেন বলেও পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়। তাতে দাবি করা হয়, অভিযুক্তকে নেতাজিনগরের একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে এসে আটকে রাখা হয়েছিল। সেই অভিযোগের তদন্তে নেমে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। তবে কে বা কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের জের এই ঘটনার ‘রহস্য’ আরও বাড়িয়ে দেয়।
অপহরণের ‘রহস্য’ উন্মোচন করতে গিয়ে গোটা ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্রের তত্ত্বই জোরালো হচ্ছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এমনকি, ঘটনার পিছনে আরও কয়েক জন যুক্ত থাকতে পারেন বলেও আশঙ্কা লালবাজারের। আপাতত তাঁদের নাগাল পেতে চাইছে পুলিশ। রহস্য ভেদ করতে ইতিমধ্যেই ঘটনার দিনে আনন্দপুর থানা এলাকার পাশাপাশি একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বেশ কিছু তথ্যও পেয়েছে পুলিশ।
আনন্দপুর থানায় ধর্ষণের লিখিত অভিযোগে তরুণী জানিয়েছিলেন, সম্পর্ক ‘জোড়া’ দেওয়ার নামে তাঁকে ডেকে এনে গাড়ির ভিতরেই বেহুঁশ করে ধর্ষণ করা হয়েছিল। অভিযুক্ত যুবক নিজেকে রাজনৈতিক প্রভাবশালী বলে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। অভিযোগে তরুণী জানান, কয়েক মাস ধরে ওই যুবক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। তাই মডেলিং এবং অভিনয়ে নামানোর প্রলোভন দেখিয়ে চুক্তিপত্রে সই করানোর নামে সোমবার তাঁকে ডাকা হয়। এর পরে ছবি তোলানোর নামে গাড়িতে তুলে, পানীয়ের সঙ্গে মাদক জাতীয় কিছু মিশিয়ে বেহুঁশ করে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। রাতে বাইপাসের মুকুন্দপুর সংলগ্ন এলাকায় গাড়ি থেকে তরুণীকে নামিয়ে দেন অভিযুক্ত। ঘটনায় গণধর্ষণের অভিযোগও করছেন তরুণী। তবে তদন্ত এগোতে তাঁর বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বেশ কিছু অসঙ্গতি মিলেছে। সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy