Advertisement
E-Paper

ব্যবস্থাপনাতেই ‘সীমাবদ্ধ’ রায়, অষ্টমীতে পথে জনজোয়ার

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের দাবি, আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে পুজোকর্তাদের একাংশের দায়সারা মনোভাব এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৩
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দুর্গাপুজোর চারটি দিনকে সিনেমা হিসেবে ধরা হলে প্রথমার্ধ ছিল ষষ্ঠী এবং সপ্তমী। ওই দু’টি দিন ছিল আদালতের কড়া রায় আর নিম্নচাপের ভ্রুকুটির। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অষ্টমীর সন্ধ্যা অবশ্যই বেপরোয়া পুজোমণ্ডপমুখী দর্শকদের। লাগামহীন জনস্রোত শনিবার দুপুরের পর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে যেন আছড়ে পড়ল। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, রবিবার নবমীতেও এমন জনস্রোত দেখা গেলে পুজো শেষে অতিমারির সঙ্কটে লাগাম পরানো যাবে তো?

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের দাবি, আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে পুজোকর্তাদের একাংশের দায়সারা মনোভাব এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা। অষ্টমীর রাতে মুদিয়ালির পুজো মণ্ডপের নো-এন্ট্রি জ়োনের কাছে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক বলেই দিলেন, “পুজোর ভিড় নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। আদালত আমাদের সুবিধা করে দিল। পুজোয় ভিড় নিয়ন্ত্রণের আর ব্যাপার নেই, মণ্ডপের সামনের নো-এন্ট্রি জ়োনে বসে ডিউটি করলেই চলে যাচ্ছে।” কিন্তু সেই জায়গার কাছাকাছি ভিড় করা বেপরোয়া জনতাকে তা হলে নিয়ন্ত্রণ করবে কে?

কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা কোনও মন্তব্য করতে চাইলেন না। তিনি শুধু জানান, বাহিনীকে পর্যাপ্ত নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তা সুজিত বসুর আবার তির্যক মন্তব্য, “মানুষকে আর কত অপদস্থ করা হবে? প্রতিমা দর্শন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর পরে কি মণ্ডপ পর্যন্ত আসতেও মানা করে দেব? পুলিশ কেন, কেউই এই উৎসবের মরসুমে তা করতে চাইবেন না।”

এই কোনও বাধা না দিতে চাওয়ার ‘সৌজন্যেই’ দেখা গেল, মণ্ডপে প্রবেশ করতে না পারলেও সপ্তমীর রাত থেকেই কালো মাথার লম্বা লাইন সুরুচি সঙ্ঘ, নাকতলা উদয়ন, একডালিয়া এভারগ্রিন, দমদম পার্ক তরুণ দল, বাগবাজার সর্বজনীন ও প্রদর্শনীর মতো পুজোর মণ্ডপ চত্বরে। অঞ্জলি এবং ভোগের জমজমাট আসর পেরিয়ে অষ্টমীর দুপুর থেকেই যা ক্রমশ বাড়তে থাকল। সুরুচি সঙ্ঘের প্রতিমা দেখতে রাত ১১টাতেও ভিড় করা হাওড়ার গোলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শ্যামল সরকার বললেন, “শুনেছি, ভিতর পর্যন্ত না গেলেও ঠাকুর দেখা যাচ্ছে। তাই চলে এসেছি। টিভিতেই দেখলাম, ওঁদের ঠাকুর এ বারেও দারুণ হয়েছে।”

আরও পড়ুন: প্রকাশ্য রাস্তায় মদ্যপানের প্রতিবাদ, ‘প্রহৃত’ দুই হোমগার্ড

অষ্টমীর সন্ধ্যায় চেতলা অগ্রণীর প্রতিমা দর্শনের লাইনে দাঁড়ানো সুচরিতা সরকার আবার কোলের শিশুকে দেখিয়ে বললেন, “রবীন্দ্রনাথ আমার প্রাণ। এখানে মণ্ডপ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির উপরে নির্ভর করে তৈরি হয়েছে বলে শুনেছি। তাই চলে এলাম। আমার ছেলের এটাই প্রথম পুজো, ওকেও এখন থেকেই বোঝাতে চাই রবীন্দ্রনাথ কী জিনিস!” কিন্তু অতিমারিতে ভয় নেই? মহিলার উত্তর, “গত এপ্রিলে খুড়োশ্বশুর করোনায় মারা গিয়েছেন। কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বলেই আর বাড়ি বসে থাকতে চাই না।”

আরও পড়ুন: মেয়ের দেহ নিয়ে দু’দিন বাড়িতে বৃদ্ধ​

এই বাড়ি বসে থাকতে না চাওয়ার তাগিদেই জনতার ভিড়ে আবার সপ্তমীর রাতে পুলিশকে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল হিন্দুস্থান পার্কের সামনের রাস্তা। পরে অবশ্য পুলিশ ওই রাস্তার কিছুটা খুলে দেয় দর্শনার্থীদের জন্য। একই অবস্থা লেক ভিউ রোডে। বালিগঞ্জ কালচারাল হয়ে সমাজসেবীর রাস্তা বন্ধ আদালতের নির্দেশের পরে। এর জেরে বালিগঞ্জ কালচারালের প্রতিমার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পুজো-জনতাকে দেখা গেল একচিলতে ফুটপাত

খোলা পেয়ে সেখান দিয়েই ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ছেন প্রতিমার মুখ বরাবর। ক্লাবের স্বেচ্ছাসেক তো বটেই, পুলিশ দিয়েও সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বালিগঞ্জ কালচারালের কর্তা অঞ্জন উকিল বললেন, “একেবারে লোক হবে না ভেবেছিলাম। সপ্তমীর রাত থেকেই তো দেখছি কলকাতার রাস্তা পুরনো চেহারা নিয়েছে, প্রচুর লোক।” দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, “সপ্তমীর পরে অষ্টমীর রাত ১০ পর্যন্ত যা দেখলাম, এই বাজারেও এত লোক হবে ভাবিনি।” ভিড় সামলাতে নাজেহাল মুদিয়ালির পুজোকর্তা মনোজ সাউ আবার বললেন, “যেখানে গার্ডরেল দিয়ে আটকেছি, সেখানকার ছবি আদালত পর্যন্ত পৌঁছলে সকলের মাথা ঘুরে যাবে। মণ্ডপ বন্ধ করিয়ে দেওয়ায় আমাদের মতো সরু রাস্তার পুজোগুলো মারা পড়েছে। কোথা দিয়ে লোক বার করব তা-ই ভেবে পাচ্ছি না।”

রাত আটটার পরে বাগবাজারের পুজোর জন্য হেঁটে যাওয়া মাথার সারি দেখে উঁচু বারান্দায় বসা ওই পুজোর কর্তা গৌতম নিয়োগী বললেন, “বাগবাজারে প্রচুর জায়গা। লোকের অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া গত ১৫ অগস্ট থেকেই মানুষের করোনার ভয় চলে গিয়েছে। আদালতের রায় আর বৃষ্টির ভয়ে দর্শনার্থীরা প্রথমার্ধটা একটু সাবধান ছিলেন। অষ্টমীর সন্ধ্যা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, খেলা কোন দিকে গড়াচ্ছে!”অতিমারির বিপদের দিকে নয়তো?

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসুর উত্তর, “আমরা তো কারও নির্দেশ অমান্য করিনি। দর্শনার্থীরা নিজেদের পথ নিজেরাই বেছে নিয়েছেন।”

Durga Puja 2020 Ashtami Puja Crowd
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy