Advertisement
E-Paper

গঙ্গা এড়িয়ে বিসর্জন পুজো মণ্ডপেই

সাবেক বাড়ির পুজোয় ঐতিহ্য ভাঙা সহজ নয়। তবু বুধবার বিজয়া দশমীতে দু’টি অভিনব বিসর্জন দেখা গেল ভবানীপুরের গিরিশ ভবনের মুখোপাধ্যায় পরিবার এবং উত্তর কলকাতায় পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়িতে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২ ০৮:২০
পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়ির প্রতিমা নিয়ে ‘আনন্দযাত্রা’। নিজস্ব চিত্র।

পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়ির প্রতিমা নিয়ে ‘আনন্দযাত্রা’। নিজস্ব চিত্র।

ঠিক পরিবর্তন নয়! তবু পরিবর্তনের সঙ্কেত। বছর তিনেক আগে দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীর উদ্যোগে শুরু হয়েছিল অন্য পথে হাঁটার চেষ্টা। এই ২০২২-এ একাধিক বারোয়ারি পুজো এবং সাবেক পারিবারিক পুজোকেও বিসর্জনে গঙ্গা এড়িয়ে জলদূষণের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে।

সাবেক বাড়ির পুজোয় ঐতিহ্য ভাঙা সহজ নয়। তবু বুধবার বিজয়া দশমীতে দু’টি অভিনব বিসর্জন দেখা গেল ভবানীপুরের গিরিশ ভবনের মুখোপাধ্যায় পরিবার এবং উত্তর কলকাতায় পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়িতে।

গিরিশ ভবনের ১৯১ বছরের পুজোয় আদিগঙ্গায় ভাসান হত। নিরঞ্জন সেরে পুজোর পুরনো একচালা কাঠামোটা সঙ্গে করে ফিরতেন বাড়ির ছেলেরা। গঙ্গার কর্দমাক্ত, পূতিগন্ধময় পরিবেশে গা গুলিয়ে উঠত। পরিবারের এক তরুণ কর্তা কৃষ্ণদ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আদিগঙ্গায় নতুন করে দূষণ এড়াতেই বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজছিলাম। সবাই মিলে আলোচনায় নতুন পথ বেরিয়েছে।’’ এ বছরই প্রতিমার একচালা কাঠামো পাল্টে লোহার করা হয়। উঠোনে ঠাকুর ভাসানের জন্য গোলাকার অস্থায়ী চৌবাচ্চায় গঙ্গাজলও মেশানো হয়েছিল। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বলছেন, ‘‘জলের অপচয়ের দিকেও খেয়াল রেখেছি। একে একে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, অসুর, সিংহের পরে দুর্গার প্রতিমা জলে চুবিয়ে মাটি গলিয়ে ফেলা হয়। গলানো মাটিও তুলে ঠাকুরদালানে রাখা হয়েছে। কাঠামো আবার ব্যবহার হবে।’’

পাথুরিয়াঘাটায় প্রসন্নকুমার ঠাকুর স্ট্রিটের ‘প্রাসাদ’-এ বিসর্জনের বদলে দেখা গিয়েছে ‘আনন্দযাত্রা’! খোল-করতাল বাজিয়ে ঠাকুরবাড়ির সুবেশ নারীপুরুষের দল শোভাযাত্রায় শুধু গেয়েছে ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও...এ বার যাওয়ার আগে’। পুজোর মূল আহ্বায়ক, বাড়ির মেয়ে সৌরজা ঠাকুরের কথায়, ‘‘আমাদের প্রতিমা বাড়িতেই ফিরে এসেছে। কুমোরটুলির শিল্পীরা পুজোর আগে নতুন করে ঠাকুর সাজিয়ে দেবেন।’’

শহরের বড় বাজেটের পুজো টালা প্রত্যয় আবার মণ্ডপের প্রতিমাটি মণ্ডপেই নিরঞ্জনের ভাবনা ভেবেছে। তাদের থিম মিউজ়িকের স্রষ্টা শুভদীপ গুহ ও সহশিল্পীরা মিলে একটি বাজনার অনুষ্ঠান করবেন। সুরের তালে তালে দমকলের সাহায্যে প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হবে। আজ, শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুরসভাও এই অনুষ্ঠানটির শরিক। রেড রোডের কার্নিভ্যালে মণ্ডপের ঠাকুরের আদলে একটি ছোট ফাইবারের প্রতিমা নিয়ে বেরোবে টালা প্রত্যয়। সেটি সংরক্ষণ করা হবে। পুজোকর্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু বলছেন, ‘‘একটি ফুলও আমরা গঙ্গায় ফেলব না।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) তথা বিধায়ক দেবাশিস কুমারের কথায়, ‘‘আরও বেশি পুজো গঙ্গা সুরক্ষায় সচেতন হলে কলকাতার পুজোরই গর্ব।’’ দেবাশিসের নিজের পুজো ত্রিধারা সম্মিলনী ২০১৯ থেকে মণ্ডপে প্রতিমা গলাচ্ছে। এ বার তাদের ফাইবারের প্রতিমাটি সংরক্ষণ করা হবে। রাজডাঙা নবোদয় সঙ্ঘের পুজোও শুক্রবার সন্ধ্যায় মণ্ডপে প্রতিমা গলিয়ে ফেলবে। তাদের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রতিমার উচ্চতা কিছুটা বেশি বলে কার্নিভ্যালে যেতে পারছি না।’’ এমনিতে নিমতলা ও বাজেকদমতলা ঘাটে ঠাকুর জলে পড়লেই তা ক্রেনে করে তুলে অন্যত্র গুঁড়িয়ে ফেলাটাই রীতি। কিন্তু বাকি ঘাটগুলিতে জলদূষণ ঠেকাতে খামতি আছে বলে মনে করেন পরিবেশকর্মী নব দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা, হাওড়া পুরসভা চাইলে গঙ্গা এড়িয়ে ভাসানে আর একটু উৎসাহ দিতে পারত।’’

Durga Puja 2022 Immersion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy