পুণে পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা। কারণ তিনি জেনেছিলেন, পুণের রাস্তায় ২০০টি বাতিস্তম্ভে আলো জ্বালানোর বিদ্যুৎ তৈরি করছে পুরসভা নিজেই। তা-ও কয়লা পুড়িয়ে কিংবা জলে টারবাইন ঘুরিয়ে নেয়, নেহাতই শহরের হোটেলগুলির বর্জ্য পুড়িয়ে।
এ ভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির কথা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু খাস কলকাতা বা লাগোয়া শহরতলিতে নিত্যদিন বর্জ্য উপচে পড়লেও এখানে এখনও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ তৈরি করা তো দূর অস্ত্, কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় বর্জ্য সামাল দেওয়ার পরিকল্পনাই গড়ে ওঠেনি। শুক্রবার মৌলালি যুবকেন্দ্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’। সেখানেও একই প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মুখে।
পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, এখানে বর্জ্য নিয়ে ভাগাড়ে ডাঁই করাই দস্তুর। বর্জ্য জমতে জমতে পূর্ব কলকাতার ধাপা, দমদমের প্রমোদনগর কিংবা হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড় কার্যত পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কম্প্যাক্টর যন্ত্র ব্যবহার করে বর্জ্যের পরিমাণ কমানোও হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে না। অনেক ক্ষেত্রেই বর্জ্য ফেলার জন্য নতুন জায়গাও খুঁজছে পুরসভাগুলি। পরিবেশকর্মীদের মতে, নতুন ভাগাড় তৈরি করার চেয়ে বর্জ্য বিদ্যুৎ তৈরি বা সার তৈরির কাজে লাগানোটাই জরুরি।
পরিবেশ দফতরের একটি সূত্রের হিসেবে, শুধু কলকাতা পুরসভা এলাকাতেই দিনে গড়ে প্রায় ৫ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। লাগোয়া পুর এলাকাগুলি ধরলে তার পরিমাণ আরও কয়েক হাজার টন বাড়বে। এই জঞ্জালের পুরোটাই ধরে গিয়ে ধাপা, প্রমোদনগর বা হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগা়ড়ে ডাঁই করা হয়। পানিহাটি, বরাহনগর, নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার ক্ষেত্রেও জঞ্জাল ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে।
সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, জঞ্জাল সংগ্রহের পরে তাকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে হবে। • জৈব উপায়ে নষ্ট হয় এমন বর্জ্য। • জৈব উপায়ে নষ্ট হয় না এমন বর্জ্য। • গার্হস্থ্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে এমন বর্জ্য। কিন্তু মহানগরে যে এখনও জঞ্জালের মধ্যে বর্জ্যের ফারাক করা সম্ভব হয়নি, তা মেনে নিচ্ছেন পরিবেশবিদ এবং পুরকর্তাদের অনেকেই। এ দিনের আলোচনা সভায় কেএমডিএ-র প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুজিত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এ নিয়ে অনেক আলোচনাসভা হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।’’ আর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত ঘোষের মতে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী বর্জ্য বাছাইয়ের কাজটা করতেই হবে।
পুর ও পরিবেশ সূত্রের মতে, জঞ্জাল ডাঁই করে যে সমস্যা মেটানো যাবে না, সে কথা বুঝতে পেরেছেন তাঁরাও। এ দিনের অনুষ্ঠানে কলকাতা পুরসভার ডিজি (কঠিন বর্জ্য) শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজারহাটে ২০ একর জমি নিয়ে নতুন বর্জ্য ফেলার জায়গা তৈরির পাশাপাশি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কলকাতার সাতটি ওয়ার্ডে বর্জ্য বাছাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে। পরিবেশ দফতরের একটি সূত্রের খবর, প্রমোদনগরের ভাগাড়েও বর্জ্য সামাল দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস উৎপাদনের পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিধানননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানা এ দিন দাবি করেছেন, তাঁরাও বর্জ্য বাছাইয়ের কাজ দ্রুত গতিতে শুরু করেছেন। এর পাশাপাশি কম্প্যাক্টরও ব্যবহার করছেন। পিপিপি মডেলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy