রেলের বাতিল স্লিপার দিয়ে তৈরি হয়েছে এই পাঁচিল। নিজস্ব চিত্র
বাতিল হয়ে যাওয়া কংক্রিটের তৈরি স্লিপার না ভেঙে তাকে কাজে লাগাচ্ছে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন। যা দিয়ে রাস্তা, সীমানা পাঁচিল নির্মাণ, গুডস শেডে ওয়াগন থেকে পণ্য ওঠানামা করার উপযোগী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে রেল। রেলের দাবি, এর ফলে আর্থিক সাশ্রয় যেমন হচ্ছে, তেমনই দূষণ কমানো সম্ভব হচ্ছে। কারণ স্লিপার ভাঙার সময়ে কংক্রিটের গুঁড়ো বাতাসে ধূলিকণা হিসাবে ওড়ায় বায়ুদূষণ বেড়ে যায়।
নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত রেললাইনের নীচে কাঠের স্লিপার ব্যবহার করা হত। এ জন্য প্রতি বছর অসংখ্য গাছ কাটা পড়ত। গাছ বাঁচাতে রেল দফতর কংক্রিটের স্লিপারের ব্যবহার শুরু করে। প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিটের (পি আর সি) ওই স্লিপারও নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলাতে হয়। প্রতি বছর রেলপথের কিছু অংশে স্লিপার বদলের কাজ বকেয়া থাকে। যা যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়। তাতেও যে পরিমাণ স্লিপার বদল করতে হয়, সেই সংখ্যা নেহাত কম নয়। চলতি বছরেই পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে প্রায়
৫০ কিলোমিটার রেললাইনের স্লিপার বদল করার কথা। সেখান থেকে প্রায় ৮০ হাজার বাতিল স্লিপার পাওয়া যাবে।
এত দিন কংক্রিটের ওই সব স্লিপার বাতিল হওয়ার পরে সেগুলি বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হত। দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সংস্থা ওই সব স্লিপার ভেঙে ভিতরের লোহার রড বার করে নিত। কংক্রিটের গুঁড়ো পড়ে থাকত। বেশির ভাগ সময়ে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা কংক্রিটের ভাঙা অংশ বা গুঁড়ো নিকাশি নালা বুজিয়ে সমস্যা তৈরি করে। সেই সমস্যা মেটাতে রেললাইন সংলগ্ন এলাকা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, রাস্তা তৈরি এবং গুডস শেডে পণ্য ওঠানামা করার জন্য ঢালু প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজে বাতিল স্লিপার ব্যবহার হচ্ছে। শিয়ালদহে গুডস শেডে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা স্লিপার দিয়ে তৈরি হচ্ছে। যার ৩০০ মিটার অংশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। রেললাইন সংলগ্ন বিভিন্ন জমি ঘেরার জন্য পাঁচিল দেওয়ার কাজেও ওই স্লিপার ব্যবহার করা হচ্ছে। স্লিপার দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার পাঁচিল তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে ১০ কিলোমিটার পাঁচিল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। নৈহাটি ও বারাসতে গুডস শেডে পণ্য ওঠানামার জন্য ঢালু প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে প্রায় ২৫ হাজার স্লিপার ব্যবহার হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, স্লিপার দিয়ে প্রতি মিটার পাঁচিল তৈরির খরচ পড়েছে ৩২০০ টাকা। আগে যা পড়ত প্রায় ১২ হাজার টাকা। রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্লিপার ভেঙে ফেলার সময়ে যে বায়ুদূষণ হয়, তা থেকেও রেহাই মিলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy