E-Paper

বিজ্ঞপ্তির ৮ মাস পরেও বাংলা-হীন নামফলক শহরের বহু দোকানে

পুর লাইসেন্স দফতরের তরফে শহরের সব ব্যবসায়ীর কাছে পাঠানো ডিমান্ড নোটিসে সাফ জানানো হয়, এ বার থেকে দোকানের নাম বাংলা হরফে লিখতেই হবে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৬:৩৯
রাজধানী শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ দোকানের নামফলকই লেখা অন্য ভাষায়।

রাজধানী শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ দোকানের নামফলকই লেখা অন্য ভাষায়। —ফাইল চিত্র।

দোকানের নামফলক বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। গত বছরের নভেম্বরে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন কলকাতা পুরসভার সচিব। বিষয়টি কার্যকর করতে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর পুরসভার তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। পাশাপাশি, পুর লাইসেন্স দফতরের তরফে শহরের সব ব্যবসায়ীর কাছে পাঠানো ডিমান্ড নোটিসে সাফ জানানো হয়, এ বার থেকে দোকানের নাম বাংলা হরফে লিখতেই হবে। কিন্তু, তার পরে আট মাসের বেশি পেরিয়ে গেলেও শহর জুড়ে সেই চিত্র চোখে পড়ছে না। বস্তুত, রাজ্যের রাজধানী শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ দোকানের নামফলকই লেখা অন্য ভাষায়।

বাংলা ও বাঙালি নিয়ে এই মুহূর্তে সরগরম জাতীয় তথা রাজ্য-রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে ১৪৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কলকাতা পুর এলাকায় অধিকাংশ দোকানের নাম বাংলায় না থাকায় অস্বস্তি বেড়েছে পুর প্রশাসনের। এই প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দোকানের নামফলক বাংলায় লেখা নিয়ে অতীতে পুরসভা নরম মনোভাব দেখিয়েছে। এ বার কঠোর হতে হবে।’’

গত বছরের ২৬ অক্টোবর পুর অধিবেশনে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে জানিয়েছিলেন, ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। তাই পুরসভার অধীনস্থ সরকারি-বেসরকারি সর্বস্তরে যাবতীয় নামফলকে বাংলা থাকা উচিত। সেই প্রস্তাবে মেয়র সম্মতি দেন। তার পরেই সেটি কার্যকর করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন পুরসচিব।

সম্প্রতি ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের শেষেও ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘শহরের সমস্ত দোকানের নামফলকে অন্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা অবশ্যই থাকতে হবে। দু’মাসের মধ্যে বাংলায় নাম না লিখলে সংশ্লিষ্ট নামফলক খুলে দেওয়া হবে।’’ পুরসভার এক শীর্ষ কর্তারও বক্তব্য ছিল, ‘‘এই বিষয়ে শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’’

পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাম পরিচালিত পুর বোর্ডে মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দোকান-রেস্তরাঁর নামফলক বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করার কথা ঘোষণা করলেও সেই সিদ্ধান্ত দিনের আলো দেখেনি। যদিও পুরসভার এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘আট মাস আগে বিজ্ঞপ্তি জারির পরে অনেক দোকানের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা হয়েছে।’’

এই প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শহরের সর্বত্র নামফলকে বাংলা বাধ্যতামূলক করতে অতীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়িত হল না। এটা কার্যকর করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। অন্যথায়, এটা বাংলা ভাষার প্রতি অপমান।’’ প্রাক্তন পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের উপ-নগরপাল থাকাকালীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অন্য ভাষার পাশাপাশি বাংলায় লেখাও চালু করেছিলেন। এখনও সেই ধারা বহাল রয়েছে। ওই প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘শহরে দোকানের নামফলকে বাংলা লেখা বাধ্যতামূলক করতে প্রশাসনকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’ লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদারের আবার মত, শুধু নামফলকে বাংলা লিখলেই বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।’’

কলকাতা পুরসভার বিজেপি পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ বলেন, ‘‘এখন মেয়র বলছেন, দোকানের নামফলক বাংলায় না লিখলে সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হবে। মেয়রের কাছে আমার প্রশ্ন, রাজ্যে কত বাংলা মাধ্যম স্কুল পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে, সে খবর তিনি কি নিয়েছেন? বাংলা নিয়ে যখন এত আবেগ, তখন নিজেদের সন্তানদের কেন ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়ান?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Language KMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy