তৎপরতা: পানশালার রান্নাঘরে আগুন নেভানোর চেষ্টা। সোমবার, পার্ক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগেই শহরের হোটেল-রেস্তরাঁর অগ্নিসুরক্ষা-বিধি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন দমকলকর্তারা। সেই বৈঠকের রেশ কাটতে না-কাটতেই আগুন লাগল পার্ক স্ট্রিটের ‘অলি পাব’-এ। সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই পানশালার হেঁশেল থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। সঙ্গে ‘আগুন আগুন’ চিৎকার। যার জেরে পার্ক স্ট্রিট জুড়েই আতঙ্ক ছড়ায়। দমকলের চারটি ইঞ্জিন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হতাহতের কোনও খবর নেই। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, রান্নাঘরের বৈদ্যুতিক তন্দুর-চুল্লির পাশে গ্যাসের পাইপ থেকে আগুন লেগেছিল। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, কী ভাবে কী ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পানশালাটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
ওই পানশালার রান্নাঘরের পিছনের অংশটিতে সাবেক ‘কারনানি ম্যানসন’ লাগোয়া বিশাল উঠোনটি থেকে আগুনের মোকাবিলা অবশ্য দমকলের পক্ষে কঠিন ছিল না। পানশালার এক কর্মী বলেন, ‘‘আমি রান্নাঘরের পিছনে ছিলাম। আচমকা গ্যাসের পাইপটি দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। তা দেখেই ‘আগুন, আগুন’ বলে চিৎকার শুরু হয়ে যায়।’’ এমনিতে সপ্তাহের যে কোনও দিনই ভিড় উপচে পড়ে ওই রেস্তরাঁ তথা পানশালাটিতে। তবে সোমবার কাজের দিন হওয়ায় সন্ধ্যার আগের ওই সময়টায় তখনও ভিড় তেমন ছিল না। দোতলা পানশালার উপর-নীচ মিলিয়ে যে ক’জন ছিলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের নিরাপদে বার করে দেওয়া হয়।
সাধারণত, কলকাতার হোটেল-রেস্তরাঁগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, আগুন নেভানোর কিছু সরঞ্জাম থাকলেও বিপদের সময়ে পরিস্থিতি সামলাতে সুরক্ষাকর্মীদের মহড়া বা ‘মক ড্রিল’-এর রেওয়াজ নেই বললেই চলে। অলি পাবের ম্যানেজার এন সি দাস অবশ্য বললেন, ‘‘পানশালা ও বহুতলের নিজস্ব আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি দিয়েই পরিস্থিতি সামলানোর কাজ শুরু হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে দমকলও চলে আসে। কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ দমকল সূত্রের খবর, মূলত রান্নাঘরটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলকাতার বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি জুড়ে রয়েছে অলি পাবের উল্টো দিকের ফুটপাতে স্টিফেন কোর্টের আগুন। ২০১০ সালে ওই আগুনে ৪৩ জন মারা গিয়েছিলেন। অলি পাবে-ও আগুন লাগে ২০১৭ সালে। তখনও এক মাসের বেশি রেস্তরাঁটি বন্ধ ছিল। এর পরেও কী ভাবে আগুন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি মুম্বইয়ের একটি পানশালায় অগ্নিকাণ্ডের পরে পার্ক স্ট্রিটের রেস্তরাঁ ও পানশালাগুলির অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দমকলকর্তারা তখন পার্ক স্ট্রিটের বিভিন্ন রেস্তরাঁ ও পানশালা পরিদর্শন করেন। দমকলের একটি সূত্রের দাবি, অলি পাব কর্তৃপক্ষকেও কয়েকটি খামতি শুধরে নিতে বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশ মানা হয়েছে কি না, তা এ বার ফের খতিয়ে দেখা হবে।
এখন ওই রেস্তরাঁর মালিক একটি পার্সি পরিবার। তাঁদের অনেকেই আবার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। স্বাধীনতার আগে এবং তার পরে পঞ্চাশ-ষাটের দশকে অলিম্পিয়া নামেও পরিচিত ছিল এই রেস্তরাঁ। ক্রমশ সবার মুখে মুখে সে হয়ে উঠেছে অলি পাব বা অলি! এ দিনের আগুনের ঘটনা কলকাতা থেকে অনেক দূরে থাকা প্রবাসীদেরও উৎকণ্ঠায় রেখেছে। খাদ্যরসিক এবং কলকাতাপ্রেমীরা অনেকেই ‘অলি’র পরের খবর পেতে মুখিয়ে রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy