আগুন লেগেছে। খবর পৌঁছল দমকলের দফতরে। তড়িৎগতিতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেও কিন্তু সময়ে পৌঁছনো গেল না। কারণ, উত্তর কলকাতার ক্যানাল ওয়েস্ট দমকল কেন্দ্রের সামনে এবং খালপাড় জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি সরাতেই হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। মাথাব্যথার আরও কারণ উল্টোডাঙা রেলসেতু। সংস্কার করায় রাস্তা উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে সেতু পেরোতে গিয়ে ঠেকে যাচ্ছে দমকলের গাড়ি। কম দূরত্ব এড়িয়ে খালপাড় দিয়ে যেতে গিয়ে গাড়ির জট কাটাতেই সময় নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ কর্মীদের।
ওই কেন্দ্রের কর্মীরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি রেলসেতুর নীচে ধাক্কা লেগে একটি দমকলের গাড়ি ভেঙে গিয়েছে। এক দমকল অফিসার জানান, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগেছিল বেলেঘাটায়। খবর এসেছিল দুপুর বারোটা নাগাদ। উল্টোডাঙা রেলসেতুর নীচ দিয়ে যাওয়া যাবে না ভেবে খালপা়ড়ের রাস্তা ধরেন তাঁরা। দ্রুত বেরিয়ে পড়লেও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি এগোবে কী? রাস্তায় তখন পর পর লরি দাঁড়িয়ে। কোনওটায় খালাসি আছে তো চালক নেই। কোনওটা পুরো ফাঁকা। আশপাশ থেকে তাঁদের ডাকিয়ে এনে রাস্তা সাফ করে এগোতে হয়েছে। এ ভাবে কাজ করা যায়!’’
কর্মীদের আর এক অভিজ্ঞতা হয়েছে গত ১০ মার্চ মুচিবাজারের উত্তম টাওয়ারে আগুন নেভাতে গিয়ে। সেখানে বহুতলের সামনেই বেআইনি ভাবে দাঁড় করানো ছিল একটি তেলের ট্যাঙ্কার। অফিসারের কথায়, ‘‘কোনও ভাবে তেল ভর্তি ট্যাঙ্কারে আগুনের ধরলে কী হত, ভাবতে পারছেন!’’ বিরক্ত কর্মীদের অভিজ্ঞতা, একাধিক বার এমন হয়েছে, পার্কিংয়ের জটে দমকল কেন্দ্র থেকে গাড়িই বার করা যায়নি। তখন অন্য কেন্দ্র থেকে গাড়ি গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।
এক সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেল, খালপা়ড় জুড়ে লরি-বাসের সারি। দমকল কেন্দ্রের গেটের সামনে কিছুটা ফাঁকা থাকলেও তাতে ইঞ্জিন ঘোরানোর মতো জায়গা নেই। এ ভাবে পার্কিং কেন? এক বাসচালকের দাবি, ‘‘নতুন তো নয়! বরাবর এখানেই গাড়ি রাখি।’’ যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ওখানে গাড়ি রাখার অনুমতি নেই। বিষয়টি পুলিশের দেখার কথা। আমিও খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ স্থানীয় মানিকতলা থানা জানাল, অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও দমকল কর্মীদের মতে, মানিকতলা থানার পুলিশকে জানিয়েও বিশেষ সুবিধা হয় না।
দমকল সূত্রের খবর, সম্প্রতি ডিজি ফায়ার, জগমোহনের কাছে এই সমস্যার কথা জানিয়ে ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার (উত্তর কলকাতা) কমলকুমার নন্দী চিঠি দিয়েছেন। দমকলের এক শীর্ষকর্তা বললেন, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
উত্তর কলকাতার একটা কেন্দ্র বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য কার্যত পঙ্গু হয়ে থাকবে! এমনটা চলতে দেওয়া যাবে না।’’
উল্টোডাঙা রেলসেতুর নীচ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সমস্যা যে মেটানো অসম্ভব, জানালেন এক পুর আধিকারিক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা পুরসভা একাধিক বার সংস্কার করায় ওই রাস্তা উঁচু হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিছু করার নেই। ব্রিজ বা রাস্তা কোনওটাই তো আর বদলানো যাবে না।’’ ডিজি ফায়ার জগমোহন অবশ্য বলেন, ‘‘সব মহলেই অবৈধ পার্কিংয়ের সমস্যার বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।’’